আওয়ামীলীগের মামলা-হামলার অংশ হিসেবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের গর্ভানিং বডির সভাপতি প্রয়াত শওকত আলী সরকার (বীরবিক্রম) এর নির্দেশে একই কলেজের সহকর্মী তিনজন বিএনপিপন্থী সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম এ্যাক্টে একটি মিথ্যা মামলা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মন। এই মামলটি দায়েরের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একদিকে যেমন আ’লীগ সভাপতির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে দিয়েছেন, অপরদিকে নিজের অদক্ষতা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য ও কলেজের জমি অধিগ্রহণের টাকা তছরুপসহ আর্থিক র্দূনীতির বিরুদ্ধে, কোন শিক্ষক- কর্মচারী যাতে কথা না বলে কিংবা প্রতিবাদ করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সর্তক করেছেন। প্রায় তিন বৎসর যাবৎ উক্ত তিন সহকারী অধ্যাপক এখনো সেই মামলার ঘানি টানছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, ৪/১২/ ২০২১ ইং তারিখে কলেজের সাধারন শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কলেজের বৃহত্তর স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মনের বিরুদ্ধে কলেজের গর্ভানিং বডির সভাপতি বরাবরে র্দূনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, করোনার প্রকোপ বাংলাদেশে সহনশীল পর্যায়ে এলে তৎকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কলেজ বন্ধ রেখেই ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ ও ২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। করোনাকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইমেন্ট পরীক্ষার বিপরীতে কোন প্রকার ফিস গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মন উক্তমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিকট অধ্যায় প্রতি ২৫/= টাকা হিসাবে জন প্রতি ৭টি অধ্যায়ের বিপরীতে মোট ১৬৩জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে মোট ১,৭১,১৫০/=( এক লাখ একাত্তর হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা) ও ২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অধ্যায় প্রতি ২৫/-টাকা হিসেবে জনপ্রতি ৮টি অধ্যায়ের বিপরীতে ১৬০জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে বিনা রশীদে কলেজের শিক্ষক আনিছুর রহমান ,নজরুল ইসলাম, নুর ইসলাম ও হুমায়ূন কবীরের সহযোগিতায় মোট ১,৯২,০০০/-( এক লক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকা) মিলে মোট ৩,৬৩,১৫০/-( তিন লক্ষ তেষট্টি হাজার ) টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেন। এছারাও অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষের একাদশ শ্রেণির ভর্তির জন্য কোন কমিটি গঠন না করে নিজেই ৮৬ জন ছাত্রীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা বিনা রশিদে গ্রহণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি ১ ও ২ নং রশিদ বহি নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রশিদে ফ্লুইড মেরে কলম দিয়ে কাটাচিরা ও ওভার রাইটিং করে টাকার অংক পরিবর্তন করে গোঁজামিলের একটি হিসেব দাঁড় করান। এছাড়াও অভিযোগে আরও বলা হয়, কলেজের ১৭টি মেহগিনি গাছ নিলামের মাধ্যমে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকায় বিক্রি করা হয়। কিন্ত তিনি উক্ত টাকা কলেজের ব্যাংক একাউন্টে জমা না করে ভূয়া বিল ভাউচার করে সম্পূর্ণ টাকা আত্নসাৎ করেন। এছাড়াও তিনি রাতের অন্ধকারে ৫০/- (পঞ্চাশ) হাজার টাকা সমমূল্যের আরও ৫টি মেহগিনি গাছ জিবির সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিজে বিক্র করে উক্ত টাকাও আত্নসাৎ করেন। এছাড়াও ভূয়া ভাউচার দিয়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল উত্তোলন করে আত্নসাৎ করছেন মর্মে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়। কিন্ত অজ্ঞাত কারনে কলেজ জিবির সভাপতি প্রয়াত শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম(আ’লীগের চিলমারী শাখার সভাপতি) এ বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের সাধারন শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে অনলাইনে , চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ শিক্ষক/কর্মচারী- নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সার্বক্ষণিক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের র্দূনীতিকে ঘিরেই উক্ত ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নানা তথ্য কলেজের সাধারন শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করেছিল। সেই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটি বর্তমানেও সক্রিয় রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মনকে এই গ্রুপে কখনই সদস্য করা হয়নি। কারণ গ্রুপটিই ছিল তার র্দূনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মীদের যোগাযোগের একটি মাধ্যম। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখছিল বিএনপিপন্থী কয়েকজন শিক্ষক। মওকা বুঝে বাংলাদেশ আ’লীগ চিলমারী শাখার সভাপতি, যিনি একই সঙ্গে চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের গর্ভানিং বডির সভাপতি ছিলেন। সেই প্রয়াত সভাপতি শওকত আলী সরকারের যোগসাজসে চিলমারী মডেল থানার তৎকালীন ওসি(তদন্ত) প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথের সহযোগিতায় ও পরামর্শে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার নিজ ফেসুবুক আইডি থেকে চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ শিক্ষক/কর্মচারী- একই নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলেন। যে গ্রুপের ৯৫ ভাগ সদস্য চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক বা কর্মচারী নয়। এরপর ওসি(তদন্ত) প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জীতেন্দ্র নাথ বর্মণফটোকপি প্রযুক্তির মাধ্যমে কারসাজির সাহায্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের সদস্য দেখান। নাটাক এখানেই শেষ নয়। আর্থিক ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক ম্যানেজ ওসি তদন্ত একই ধর্মবলম্বী হওয়ায় ফেসবুকে প্রচারের মাধ্যমে জীতেন্দ্র নাথের মান সন্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে মর্মে সাইবার ক্রাইম এ্যাক্টে জীতেন্দ্র নাথ বর্মন কর্তৃক দায়ের কৃত মিথ্যা মামলায় কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম স্বপন, নাজমুল হুদা পারভেজ ও ফজলুল হক নামের তিনজন বিএনপি পন্থী (সকলেই সহকারী অধ্যাপক এবং বিএনপি উপজেলা কমিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি) শিক্ষকে ফাসিয়ে দেন। মামলা নং-১৩৩/২২ ধারা -২৯(১)। ফেসবুক একটি সরাসরি সামাজিক মাধ্যম। যেখানে কোন কিছু লিখে পোষ্ট দিলে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। অপরদিকে ফেসবুক ম্যোসেঞ্জার গ্রুপ হলো কতিপয় ব্যাক্তি গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে কনর্ভাসনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সুতরাং ম্যাসেঞ্জারের কোন কথা ম্যাসেঞ্জারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাব সদস্য ছাড়া পাবলিকলি সরাসরি ছড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এসব জেনেও মামলা দায়েরের সময় দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) ও তৎকালীন চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ম্যানেজ হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এই মিথ্যা মামলাটি সাইবার ক্রাইম রংপুর আদালতে প্রমাণিত সত্য হিসাবে বিচারের জন্য চার্জসীট দিয়ে পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম,সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা পারভেজ ও ফজলুল হকের মুখোমুখি হলে শিক্ষকবৃন্দ কুড়িগ্রাম খবরকে জানান, যেহেতু ইতোপূর্বে কলেজের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষকরা লিখিত অভিযোগ করেছিল। তিনি ইচ্ছা করলে শিক্ষকদের অভিযোগ গুলি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি তা না করে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়ে, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ব্যবহার করে এই মামলাটি দায়ের করেন। কারন আমরা তিনজন সহকারী অধ্যাপকই বিএনপির চিলমারী উপজেলা পর্যায়ের সক্রিয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। আ’লীগের দমন ও নীপিড়নের অংশ হিসেবে তিনি থানাকে প্রভাবিত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এই মামলাটি করিয়েছেন। আমরা এখনো সেই মিথ্যা মামলাটির ঘানি টানছি। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে সত্য উদঘাটন পূর্বক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের র্দূনীতির বিচার দাবিসহ মিথ্যা মামলা দায়েরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক মর্মে তারা সরকারের নিকট দাবি জানান।