গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় ইউরোপের সমর্থন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশ: ৯ মার্চ, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় ইউরোপের সমর্থন

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপের চার প্রভাবশালী দেশ—ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেন। মিশর প্রস্তাবিত এ পরিকল্পনাকে ‘বাস্তবসম্মত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো গাজার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

আরব নেতাদের সমর্থিত এ পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজাকে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এটি বাস্তবায়িত হবে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত না করেই। পরিকল্পনার আওতায় সাময়িকভাবে গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ কমিটির হাতে থাকবে এবং সেখানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

শনিবার ইউরোপের চারটি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারা আরব রাষ্ট্রগুলোর উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ পরিকল্পনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ হিসেবে দেখছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজার জনগণের দুর্বিষহ জীবনমান উন্নয়নে এ উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে।

এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হতো। তবে আরব নেতারা ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে মিশরের উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে।

হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, মিশরের পরিকল্পনা গাজার বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় না। ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপ আর অবিস্ফোরিত অস্ত্রের মধ্যে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসমুক্ত গাজা পুনর্গঠনে তার লক্ষ্য অটুট রেখেছেন।’

গাজায় চলমান অস্থিরতা এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে হামাস নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়। এই প্রস্তাবে আরও কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার শর্ত রয়েছে। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা আগের সমঝোতা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন চায়, যার আওতায় ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, কাতারে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে। তবে এই আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল আসবে কি না, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া বলেছেন, আসন্ন আলোচনায় ‘ইতিবাচক কিছু’ পাওয়া যেতে পারে।

বর্তমানে গাজার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে অধিকাংশই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যা গাজায় মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অবকাঠামোর বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW