সারা দেশে চলমান ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এক ব্যতিক্রমী লাঠি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৯ মার্চ) বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বাঁশের ছোট লাঠি হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন ও শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘জান, মালের নিরাপত্তা দে/নইলে গদি ছেড়ে দে’, ‘খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন/রুখে দাঁড়াও জনগণ’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার করতে হবে’, ‘ধর্ষকরা ধর্ষণ করে, প্রশাসন কী করে?’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
লাঠি মিছিল থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল—
১. জননিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ। ২. দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। ৩. পাহাড় ও সমতলসহ দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। ৪. ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনে যৌক্তিক সংশোধন ও সংযোজন করা। ৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও পদক্ষেপ গ্রহণ। ৬. ধর্ষণের মামলা গ্রহণে পুলিশের অযথা জটিলতা দূর করা। ৭. ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের জন্য ২০১১ সালে পর্যালোচিত সাক্ষী সুরক্ষা আইন পুনরায় কার্যকর করা। ৮. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও বহিষ্কারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচার। ৯. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা।
কর্মসূচিতে উপস্থিত লেখক নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে লাঠি হাতে নিয়েছি, কারণ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শিশু, নারীসহ সমাজের প্রতিটি মানুষ যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত বিচার বলতে বোঝায় না যে তাড়াহুড়ো করে বিচার করা হবে, বরং সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস নাঈম বলেন, ‘এটি কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের আয়োজিত কর্মসূচি নয়, বরং সার্বজনীন প্রতিবাদ। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই লাঠি মিছিল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়।