বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া ঝালকাঠির সেলিম তালুকদারের নবজাতক কন্যার পাশে দাড়াচ্ছেন জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঝালকাঠির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তার স্ত্রী সুমি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায় কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম তালুকদার। মৃত্যুর সাত মাস সাতদিন পর শহীদ সেলিমের উত্তরাধকিার আসলো পৃথিবিতে। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে রোজা। তাই কষ্টের মাঝেও আনন্দের বন্যা বইছে এ পরিবারে। রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নবজাতককে দেখতে এসে বিভিন্ন উপহার প্রদান করা হয়েছে। শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রীর হাতে উপহার তুলে দেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। এসময় পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেলিম তালুকদারের নবজাতক সন্তানকে দেখতে যান। এসময় তার সাথে বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঝালকাঠির নেতৃবৃন্দের মধ্যে মো. শাহীন আলম, আব্দুলাহ ওমর, আবু হানিফ, নাজমুল হাসান টিটু, মুফতি মাসুম বিলাহ, মো. মাহাবুব মিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঝালকাঠির সংগঠকরা যান সেখানে। দেড়টার দিকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নবজাতক শিশুকে শুভেচ্ছা জানাতে যান। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হক নান্নুু, জেলা বিএপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহদাৎ হোসেন ও জাতীয় নাগরিক পাট্ট্রি পক্ষ থেকে শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তারকে ফুল ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
ঝলকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে শনিবার রাত ৮টায় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সেলিম ও সুমী দম্পতির সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়। এর আগে সেলিমের মৃত্যুর পর গত বছরের ৮ আগস্ট ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার আড়াইমাসের অন্তাসত্ত্বা। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২৪'র ৩১জুলাই ঢাকায় নিহত হন।
উলেখ্য, ২৪ এর জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তারের গর্ভে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। ঝলকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে শনিবার রাত ৮টায় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সেলিম ও সুমীর সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়। এর আগে সেলিমের মৃত্যুর পর গত বছরের ৮ আগস্ট ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার আড়াইমাসের অন্তসত্ত্বা। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মলিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২৪'র ৩১জুলাই ঢাকায় নিহত হন। অথচ এর তিনদিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেঝো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩১ জুলাই রাতে তার মৃত্যু হয়। সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা নালাগে। আমি যতদিন বাঁচবো শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকে তার পরিচয় দেবো।’
ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকতো তাহলে প্রথম সন্তান, কত আনন্দ পেতো। তা সেলিমের ভাগ্যে নেই।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই আমার ছেলেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।’
নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম।
মারা যাওয়ার ৪ দিন পর সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা করিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন অন্তসত্ত্বা তিনি। মারা যাওয়ার আগে সেলিম তালুকদার জানতেন না সন্তানের বাবা হবেন।