পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে একটি ভয়াবহ ট্রেন হামলায় ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছে সশস্ত্র জঙ্গিরা। মঙ্গলবার সকালে বেলুচিস্তানের কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ট্রেনটির ৯টি বগিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিল। এই ঘটনায় ট্রেনের চালকসহ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে রাখে।
বেলুচিস্তান রেলওয়ের কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাশিফ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, "বন্দুকধারীরা চলন্ত ট্রেনটিতে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছে।" তিনি আরও জানান, ৮ নম্বর টানেলের কাছে সশস্ত্র হামলাকারীরা ট্রেনটি থামিয়ে দেয়, যা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় তাদের জন্য হামলার পরিকল্পনা ও আশ্রয় নেওয়া সহজ হয়েছিল।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসা সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা ট্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীসহ যাত্রীদের জিম্মি করেছে। তবে, প্রাদেশিক সরকার কিংবা রেলওয়ের কর্মকর্তারা বিএলএ-এর জিম্মি করার দাবিটি নিশ্চিত করেনি।
বেলুচিস্তানের সরকার দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ জানান, "গোটা প্রদেশে সরকারি সকল প্রতিষ্ঠান উদ্ধার কাজের জন্য সক্রিয় রয়েছে।" তিনি আরও বলেন, যেহেতু ট্রেনটি পাহাড়ি এলাকায় আটকে পড়েছে, সেখানকার ভূখণ্ডের কারণে উদ্ধারকাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
এ ঘটনার পর পাকিস্তানের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, "যারা নিরীহ যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।" সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে, গত বছর পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী গত এক বছরে আক্রমণগুলোর তীব্রতা বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম মাসে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের মধ্যে ১৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য ছিল।
বেলুচিস্তানে এই ধরনের হামলার বৃদ্ধি, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য বড় একটি সংকেত, বিশেষ করে কেপি ও বেলুচিস্তান অঞ্চলে চলমান সন্ত্রাসী কার্যকলাপগুলো উদ্বেগজনক। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ২০১৪ সালের মতোই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এই ঘটনায়, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেলুচিস্তানের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপ সন্ত্রাসী হামলার নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাও প্রকাশ করছে।