বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সফল বাস্তবায়নের কারণে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। পোলিওসহ কয়েকটি রোগ থেকে দেশ এখন প্রায় মুক্ত। কিন্তু কয়েকটি টিকার অব্যাহত সংকটের কারণে নতুনভাবে কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, বেশ কিছু জেলায় গত জানুয়ারি মাস থেকে শিশুদের টিকার সংকট অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত এ সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে শিশুদের ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক বা টিকা দেওয়া হয়। এসব টিকার মধ্যে বর্তমানে পিসিভি, আইপিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআরের সংকট চলছে। জানা যায়, সরকারি হাসপাতালসহ টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে বারবার গিয়েও শিশুদের টিকা দিতে না পারায় অভিভাবকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার দীর্ঘ বিরতিতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে নতুন করে বেশ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। টিকা স্বল্পতার এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে চট্টগ্রামে। সেখানে একটি এলাকায় হামের টিকা না দেওয়ায় অনেক শিশু হামে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিশুরা যখন বাংলাদেশে আসে, তখন ব্যাপক আকারে ডিপথেরিয়া দেখা দেয়। কারণ এসব শিশু মায়ানমারে বসবাসের সময় টিকা পায়নি। ডিপথেরিয়াসহ আরো কিছু রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। টিকার সংকট আমরা ব্যাপকভাবে উপলব্ধি করেছি করোনা মহামারির সময়। আন্তর্জাতিক উৎসগুলো থেকেও অনেক সময় টিকা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই টিকা তৈরির নিজস্ব উৎসকে শক্তিশালী করাসহ স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এর আগে চলতি সংকট মোকাবেলায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত টিকার সংকট দূরে উদ্যোগ নেবে।