কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়ে ছিল এক দম্পতি। তাদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। দু’জনকে তার বাসায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান উত্তরখানের ভাড়া বাসায়। চাকরির কথা বলে নিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর আচরণ’। সুযোগ পেলেই যুবককে বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান।
সবশেষ গত রোববার রাতে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন, ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। ঘটনাস্থলেই সাইফর রহমান মারা যান। নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্ত মাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়।
পরে ১১ মার্চ ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দম্পতি হলেন- মো. নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)।
বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত ১০ মার্চ রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা করেন।
গ্রেফতার দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে উত্তরার ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২-৩ দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্রেফতার মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সাইফুর তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন দম্পতিকে। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রুপাকে তার ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক বেডে ছিলেন নিহত সাইফুর রহমান এবং দম্পতি রুপা ও নাজিম। সে রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান রূপাকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নাজিম ঘুম থেকে জেগে রান্নাঘর থেকে বটি এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃতুবরণ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।