শিশু আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু: প্রধান উপদেষ্টার শোক ও দ্রুত বিচারের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৩ মার্চ, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
শিশু আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু: প্রধান উপদেষ্টার শোক ও দ্রুত বিচারের নির্দেশ

মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার আট বছরের শিশু আছিয়া খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নৃশংসতার শিকার হয় আছিয়া। পাশবিক নির্যাতনের পর তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা অবস্থায় ৭ মার্চ রাতে শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ মার্চ সন্ধ্যায় শিশুটিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সিএমএইচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় আছিয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়; প্রথম দুইবার তাকে স্থিতিশীল করা গেলেও শেষবার হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।

শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা এই নির্মম ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও শিশুটির পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিবারটির পাশে থাকবে এবং সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।

এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০), তার দুলাভাই সজীব হোসেন, দেবর রাতুল শেখ ও শ্বাশুড়ি জাবেদা বেগম। মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

গত ৯ মার্চ রাতে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক হিটু শেখের সাতদিন এবং অন্য তিনজনের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে আসামিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

শিশু আছিয়ার মৃত্যু পুরো দেশকে শোকাহত করেছে। এই নির্মমতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধের জাগরণ প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে