অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে

এফএনএস : | প্রকাশ: ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে

অ্যান্টিবায়োটিক হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক ওষুধ, যা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং তাদের বংশবিস্তার রোধ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, অ্যান্টিবায়োটিক হলো, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের সর্বশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা, যেটি ব্যর্থ হলে রোগী বাঁচানো সম্ভব নয়। অথচ, আমাদের দেশে এই অ্যান্টিবায়োটিকের মারাত্মক অপব্যবহার প্রতিনিয়তই পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে রোগীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আমাদের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, যেকোনো রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া শুরু করা। এভাবে উল্টোপাল্টা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মানবদেহে বিভিন্ন তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের সহজ লভ্যতা বন্ধে এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া এর বিক্রি বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সে ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। অথচ অ্যান্টিবায়োটিকের অতি মাত্রায় ব্যবহার বাড়িয়ে তুলছে সুপারবাগের ঝুঁকি। প্রতি বছর সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় সাত লাখ মানুষ মারা যান এই কারণে। সারা দেশেই এখনও নিবন্ধিত চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে জীবাণু এখন নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার এবং অপব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের ডিএনএতে পরিবর্তন আনতে পারে। দেখা গেছে, চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে দিয়েছে ৫০০ এমজি অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু ওষুধে আছে ২০০ বা ১০০ এমজি। এতে জীবাণু ভয়ংকর প্রতিরোধী হয়ে গেছে। আবার হাঁস-মুরগি-গরুসহ বিভিন্ন পশুর খামারিরা ব্যবহার করছে মানুষের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক। পশুদের জন্য অনেক অ্যান্টিবায়োটিক আছে। কিন্তু তা বেশিরভাগ খামারিরা ব্যবহার করেন না। তারা মানুষের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার কারণে এসব হাঁস-মুরগি-মাছ-গরুর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে স্বল্প পরিসরে অ্যান্টিবায়োটিক চলে যায়। কারণ এটা রান্নায়ও নষ্ট হয় না, পানিতে ধুলেও থেকে যায়। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন মানবদেহের ওই অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কোন কাজ হয় না। কারণ জীবাণু আগে থেকেই সেই অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে গেছে। তাই কাজ হয় না। এসব কারণে জীবাণু ভয়ংকর প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের শরীরেই এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে জীবাণু। স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে