দেশের উল্লেখযোগ্য বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ জেলা। এই মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মাঠজুড়ে চলছে আলু উত্তোলনের আয়োজন। তবে গত বছরের তুলনায় আলু উৎপাদন বেশি হলেও বাজার মূল্য নিয়ে কৃষকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কৃষক-কৃষাণীরা আলু জমি থেকে তোলার পর বস্তাবন্দী করে হিমাগারে সংরক্ষণে কিংবা বাজারজাত করনে ব্যস্ত সময় পার করছে । জমিতে এক একটা গোল আলু যেনো কৃষকের কাছে গোলাকার সোনার চাকা।
এই কর্মযজ্ঞে যোগ দিয়ে রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের হাজারো নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা আলু উত্তোলনে মাঠে কাজ করছে। এই আলু উত্তোলন চলবে আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত ।
গত বছর আলুর দামে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা তাই এ বছর চড়া দামে বীজ আলু, সার নিয়ে আলুর আবাদ করেছেন। গত বছর সাধারণ ভোক্তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করেছেন। এতে সাধারণ মানুষ আলুর দামে নাভিশ্বাস ফেললেও কৃষকদের মাঝে বেশ স্বস্থি দেখা গেছে। গত বছর আলুর দাম বেশি হওয়ায় মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে মোটা অংকে লাভবান হয়েছে। এ বছর কৃষক বেশী দামের আশায় আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আলুর বর্তমান বাজার মূল্য নিম্নমূখী হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।
প্রান্তিক কৃষকরা জানান খাল দখল-ভরাটে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে বর্ষার পানি আটকে থাকায় এ বছর আগাম আলু চাষাবাদ ব্যাহত হয়।
এছাড়া গত মৌসুমে আলুর বাজার মূল্যে লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার চড়া দামে বীজ আলু, সার ও জমি ভাড়া নিয়ে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করছেন। বর্তমান বাজারে আলুর মূল্য কম তাই এবছর আর্থিক ক্ষতির মুখে পরবেন বলে মনে করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১শ ১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় গত দুই সপ্তাহ যাবত আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাঠজুড়ে কৃষকরা আলু তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কৃষক মাটি খুঁড়ে তোলে আনছে আলু। আবার উত্তোলন শেষে মাঠেই স্তুপ করে রাখছে। পরে বাছাই করে আলু বস্তাবন্দি করে বিক্রির জন্য বাজারজাত করা হচ্ছে। আবার বস্তাবন্দি আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নিয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় কৃষক কার্তিক দাসের সাথে তিনি বলেন, গত বছর আলুর বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় এ বছর আলুর জমি ভাড়া-বর্গা চাষের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। গত বারের চেয়ে দিগুণ-তিনগুণ মূল্যে জমি ভাড়া বীজ আলু ও সার ক্রয় করে এবার তিনি ১২ একর জমিতে আলুর আবাদ করছেন। এ বছর উৎপাদন মূল্য বেশি থাকায় এবং বর্তমান বাজারে আলুর মূল্য ১৬ থেকে ১৭ থাকায় পুঁজি উঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
কৃষক জসীম শেখ জানান, এবার বীজ আলু খুব সংকট ছিলো ৪০ কেজির ১ বস্তা বীজ আলুর মূল্য ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং বাক্স আলুর বীজ ১ বক্সের মূল্য ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করে আলু রোপণ করেছি। ৪০ কেজি ১ বস্তা বীজ আলুতে ২০ থেকে ২২ মণ আলু উৎপাদন হয়। এবার এতো টাকা খরচ করে আলু রোপণ করছি। বর্তমান বাজার মূল্য কম। কিভাবে পুঁজি উঠাবো তা নিয়ে চিন্তিত আছি।
আক্তার হোসেন শেখ বলেন, এ বছর তিনি ২০ একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এ বছর উৎপাদন মূল্য বেশি থাকায় বিক্রয় মূল্য নিয়ে চিন্তিত।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১’শ ১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি হয়েছে। এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা আলু এখন বিক্রি না করে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করে তাহলে দাম ভালো পাবে।