সমাজে অন্যান্ন মেয়েদের চেয়ে একটু অন্যরকম সাদিয়া সুলতানা।তাই সমাজের বাঁকা চোখ তাকে তাড়িয়ে বেড়ালেও এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।আপন গতিতে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে ছুটছেন বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সাদিয়া সুলতানা। ছোটবেলা থেকে যে চিত্রাঙ্কনে বুদ থাকতো তা ইতোমধ্যে তাকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষ গুলোও তাকে নিয়ে গর্বিত।সমাজে অন্যান্ন মেয়েদের চেয়ে একটু অন্যরকম সাদিয়া সুলতানা।তাই সমাজের বাঁকা চোখ তাকে তাড়িয়ে বেড়ালেও এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।আপন গতিতে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে ছুটছেন বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সাদিয়া সুলতানা। ছোটবেলা থেকে যে চিত্রাঙ্কনে বুদ থাকতো তা ইতোমধ্যে তাকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষ গুলোও তাকে নিয়ে গর্বিত।তার আঁকা ছবিগুলো মানুষের প্রশংসা কুড়ায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের আগেও সদিয়া অনায়াসে আঁকতে পারতেন যেকোনো ছবি। এঁকেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি,খরা, বন্যা আর দুর্ভিক্ষের নানা ছবি।পছন্দ হওয়ায় অনেককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন তার আঁকা ছবি।স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, ছোটবেলা থেকে সাদিয়ার ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল। অনেক সময় বিনা পয়সায় এলাকার ছেলে মেয়েদের ছবি আঁকা শিখিয়ে থাকেন। প্রশাসন একটু নজর দিলে সাদিয়া আরও বহুদুর এগিয়ে যেতে পারবে।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ এলাকার সাদিয়া সুলতানা আবু সাঈদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বৈষম্যের বিুদ্ধে আত্মত্যাগের দৃশ্য্য, রবীন্দ্রনাথ কাজী নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, গ্রামীন জীবন,নদীর দৃশ্য,গ্রামের মেঠোপথ,সারি সারি গাছ, কৃষকের ঘরসহ গ্রাম বাংলার নানা আবহ ফুটে উঠেছে চিত্রকর্মে। এগুলো এঁকেছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোরী সাদিয়া সুলতানা। মাত্র ১১ বছর বয়সের এই কিশোরী পিতা মাতা ভাই-বোন আত্নীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবী কারো সাথেই বলতে পারেন না প্রয়োজনীয় কিংবা মনের যেকোনো কথা। তাতে কি হয়েছে মনের ক্যানভাসে জড়ো হওয়া সব গুচ্চ রং তুলির আচড়ে কাগজের পাতায় ফুটিয়ে তুলছেন অষ্টম শ্রেনি পড়ুয়া বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সাদিয়া সুলতানা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই কিশোরী কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার বনানী পাড়ার বাসিন্দা মশিউর রহমান ও শাহনাজ পারভিন দম্পতির প্রথম সন্তান। জন্মের দু'বছর অতিবাহিত হলেও যখন স্বাভাবিক ভাবে সাদিয়া কথা বলতে এবং শুনতে না পায় তখন তার বাবা মা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তার নিশ্চিত করেন সাদিয়া কানে শুনতে কিংবা কথা বলতে পারবে না। এরপর ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত শ্রবন প্রতিবন্ধীদের স্কুলে নিয়মিত থেরাপি দেওয়ার সময় সেখানে থাকা ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত সে। বাড়িতে এসে কলম দিয়েই বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি আঁকতে শুরু মেয়ের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ আগ্রহ দেখে বাবা তাকে রং তুলি ও কাগজ কিনে দেয়। এভাবেই ছবি আঁকার হাতে খড়ি হয় বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সাড়িয়ার। যেকোনো ছবি দেখে হুবহু এঁকে দিতে পারে সাদিয়া। মাত্র ৬ বছর বয়সেই ঢাকা শিশু একাডেমিতে এক প্রতিযোগিতায় চিত্রাংকনে প্রথম স্থান অধিকার করে পুরস্কার লাভ করে।বর্তমানে সে ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীতে চিত্রাংকন শ্রেনীতে নিয়মিত ছাত্রী। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় সাদিয়া অংশ গ্রহন করে অর্জন করেছে নানা পুরস্কার। ছবি আঁকার পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই কিশোরী লেকাপড়ায় বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছে। পরিবার ও কাছের কিছু আত্নীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতা সুষ্ঠু সামাজিক করণের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করার প্রচেষ্টায় সর্বদা এগিয়ে যাচ্ছে সে।শহরের সলিমুননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনিতে পড়ুয়া প্রকিবন্ধী সাদিয়া সুলতানার সহপাঠী সিথি হক,আনিকা আয়শা ও সুমনা আক্তার তুরানী বলেন,জানাই, সাদিয়া আমাদের খুব ভালো একজন বন্ধু। আমাদের মত ও স্বাভাবিক ভাবে শুনতে এবং কথা বলতে না পারলেও তার সাথে আমাদের ভাবের আদান-প্রদানে কোন সমস্যা হয় না। আমরা ইশারা ইঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালায়। ও লেখাপড়ার পাশাপাশি খুব ভালো ছবি আঁকে। ওর আঁকা ছবি দেখে আমরা মুগ্ধ হই। ছবি একেঁই ও একদিন সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাদিয়া খুব মেধাবী। ওর ছবি আঁকার আগ্রহ, কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং একাগ্রত দেখে আমার মনে হয়েছে সে চিত্রাঙ্কনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমার এখানে শ্রবন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বেশ কয়েকজন রয়েছে তার মধ্যে সাদিয়া অন্যতম। আমি বিশ্বাস করি ওর প্রবল ইচ্ছা শক্তি ওকে সাফল্য চুড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দিবে। সাদিয়া সুলতানার কাকী সোনিয়া বেগম বলেন, আমার দেবরের একমাত্র মেয়ে সাদিয়া। আল্লাহ তার কানে শুনতে পাওয়াএবং কথা বলার শক্তি না দিলেও তার মধ্যে যে বিশেষ প্রতিভা দান করেছেন তার জন্য আমরা আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ। আল্লাহ সহায়থাকলে ছবি এঁকেই আমাদের মেয়ে একদিন সেরাদের তালকায় নাম লেখাবে।
বাক ও শ্রবন প্রদিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া সুলতানার মমতাময়ী মা শাহনাজ পারভীন আবেগাপ্লুত ভাবে বলেন,আমার মেয়ে কথা বলতে না পারার কারণে অনেকেই তার সাথে মেশে না,তাকে এড়িয়ে চলে। পরিচিত জনদের নিকট থেকে এমন আচরণ পেয়ে সে বাড়িতে এসে অনেক কান্না করে। আমারও খারাপ লাগে। আমার মেয়ে অনেক শান্ত।নিজের সব কাজ সে সুন্দর মত দআয়ত্ব নিয়ে করে। আর ছবি আঁকার প্রতি তার খুব আগ্রহ। সে ছবি আঁকা শিখতে চাই এবং দেশের বাইরে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করার প্রবল ইচ্ছার কথাও সে আমাকে জানিয়েছে। সে তার স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করে যাচ্ছে ভালো কিছু করার। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমিও তার বাবা সার্বক্ষণিক তাকে লেখাপড়া ও ছবি আঁকার ব্যাপারে সহায়তা করে যা”িছ।তার ছবি আঁকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী যেন প্রতিবদ্ধবতা না হয় সেটিই আমাদের সকলের কাম্য।