গড়াই নদীর ওপর রাজবাড়ী, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে যে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটির কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এটি শুধু তিন জেলার মানুষ নয়, আশপাশের আরও চার জেলার মানুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘ বিলম্ব এবং নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে স্থানীয় জনগণ তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেতুটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ জুন। ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই পিএসসি গার্ডার সেতুর কাজ ৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা বাজেট নিয়ে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কেবল পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। অথচ প্রথম দফায় কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল ২০২৩ সালের জুন মাস, যা পরে আরও এক দফা বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ এখনো শুরুই হয়নি। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথ আরও দীর্ঘ হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, সেতুটির নির্মাণকাজ ঢিলেঢালাভাবে চলছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে, এবং কাজের অগ্রগতি অত্যন্ত শ্লথ। পাঁচটি স্প্যানের মধ্যে মাত্র দুটি বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, আর বাকি তিনটির কোনো অগ্রগতি নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে দৈনিক গড়ে মাত্র ৭ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন, যা এত বড় প্রকল্পের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রকল্পের কাজ চলছে, অথচ শেষ হওয়ার নাম নেই। সেতুটি না থাকায় প্রতিদিন তাদের ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এটি শুধু সময়ের অপচয় নয়, আর্থিকভাবেও মানুষকে ক্ষতির মুখে ফেলছে। দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবি তুলেছেন তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজের ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হলে দ্রুতই বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তবে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মতে, প্রকল্পে কিছু ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে গতি বাড়ানো হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা সমাধান হলে নির্মাণকাজ আরও গতিশীল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গড়াই নদীর ওপর সেতুটি শুধু তিন জেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করবে না, বরং এটি সাত জেলার মানুষের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা এখন সময়ের দাবি। কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপই পারে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে।