রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অর্ধ শতাধিক ইটভাটার মধ্যে মাত্র ৫ টিতে অভিযান পরিচালনা করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এদিকে অবশিষ্ট ইটভাটাগুলো দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিগত ২০১৮ সালে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ৩২টি ভাটার মধ্যে এনামুল হক, রেজানুর শামীম ও আহসান হাবীবসহ ৩জনের পরিবেশের ছাড়পত্র ছিল। এরপর ২০১৯ সাল থেকে নতুন করে গড়ে উঠাসহ ৫৫ ভাটার কাউকে পরবর্তী বছরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়নি। তবে ভাটা মালিকরা প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তরে নির্ধারিত নবায়ন ফি জমা দিয়ে অনুমতির চিঠি ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কেউ কেউ হাইকোর্টে রীট আবেদন করে ভাটা চালাচ্ছেন। এ বছরও ২২টি ভাটা হাইকোর্টে রীট মুলে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০১৩ সালে উচ্চ আদালত স্থায়ী চিমনী ভাটা বন্ধ করে দিলেও আদালতের রায় উপেক্ষা করে স্থায়ী চিমনীতে ১৬টি ভাটা চলছে এ উপজেলায়। খোদ উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার দুরত্বে মহাসড়কের পার্শ্বে মকিমপুরে স্থায়ী চিমনীতে আগুন জ্বলে বছরের পর বছর। অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ভাটায় কিছু কয়লা রেখে জ্বালানি কাজে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বনের কাঠ। জ্বালানি কাজে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিকেরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়েই অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ইট। ভাটার ধোঁয়া পরিবেশ নষ্ট করছে এবং ভাটার কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলে ধুলাবালির কারনে এলাকার কোমলমতি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েসহ পথচারীদের শ্বাসকষ্ট জর্নিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়াও প্রতিদিন হাজারো মাহিন্দ্র দিয়ে কৃষি জমির মাটি ভাটায় বহন করা হচ্ছে, ইটভাটাগুলো নির্বিচারে মাটি গিলে, পোড়া ইট বের করা হচ্ছে। ইটভাটার গাড়ি স্কুল কলেজ,হাটবাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং রাস্তাঘাটের বাকল বা ছাল তুলছে। এদের কারনে এলাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, ২০১৯ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুরত্বের কারনে পরিবেশ অধিদপ্তর কাউকে অনুমতি পত্র দিচ্ছে না। ২০২৪ সালে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৮টি ভাটা বন্ধে নোটিশ জারি করেই দায়িত্ব সেরেছেন। এরপর প্রতি বছর এসব ভাটা মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্্ন দিবস ও অনুষ্ঠান পালনের নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। যা ভাগাভাগি হয় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মাঝে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে পীরগঞ্জের ইটভাটাগুলো। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম কুমেদপুর ইউনিয়নে ব্যক্তির এবং পরবর্তীতে মদনখালী ইউনিয়নে ২ টি ভাটায় অভিযান চালিয়েই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ইতি টেনেছেন। যা রীতিমতো রহস্যজনক। এ নিয়ে নানা গুঞ্জনেরও সৃষ্টি হয়েছে ! মুলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসাথে ৪ টি দপ্তর চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। কোন দপ্তরেই ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। সবগুলোতেই একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। দপ্তরগুলো হচ্ছে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ,পৌরসভা কার্যালয়,সহকারি কমিশনার(ভুমি) এর কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়। অভিযোগ রয়েছে,এসব দপ্তরে গুরুত্বপুর্ন কাজের জন্য আসা লোকজন প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দেশের শ্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দেয়া হয়। সঙ্গত কারনেই ওই দপ্তরের কাজগুলো দায়িত্ব এসে পড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর। এর পর পরই পৌরসভাগুলোও বাতিল করে দেয়ায় পৌরসভার মতো জটিল বিভাগের কাজও এসে পড়ে একই ব্যক্তির উপরে। গত বছরের শেষের দিকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি) তকী ফয়সাল তালুকদার দেশের বাইরে চলে যান। যে কারনে ওই বিভাগের দায়িত্বও কাঁধে চাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপরে। এছাড়া নিজের দায়িত্ব তো রয়েছেই। চারটি বিভাগের গুরুত্বপুর্ন ও জটিল কাজগুলো একযোগে দেখাশোনা করা উক্ত কর্মকর্তার জন্য বেশি চাপ হয়েছে। যে কারনে তিনি নাকি প্রায় সময়ই বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনের সাথে অসদাচরন করে থাকেন। অনেকের ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। সংশ্লিষ্টরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মাসের পর মাস অনেকের ফাইল পড়ে আছে উক্ত দপ্তরে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতাও পড়ে আছে কয়েকমাস ধরে। শুধুমাত্র একটি স্বাক্ষরের অভাবে। দেন দরবার করতে গেলে বকাঝকা খেতে হচ্ছে। অনেক ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। মোট কথা জনভোগান্তি কয়েকগুন পর্যন্ত বেড়েছে। সঙ্গত কারনেই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।পীরগঞ্জে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা: ৫টি অভিযান করেই ক্লান্ত প্রশাসন
এফএনএস (মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান; পীরগঞ্জ, রংপুর) : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অর্ধ শতাধিক ইটভাটার মধ্যে মাত্র ৫ টিতে অভিযান পরিচালনা করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এদিকে অবশিষ্ট ইটভাটাগুলো দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিগত ২০১৮ সালে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ৩২টি ভাটার মধ্যে এনামুল হক, রেজানুর শামীম ও আহসান হাবীবসহ ৩জনের পরিবেশের ছাড়পত্র ছিল। এরপর ২০১৯ সাল থেকে নতুন করে গড়ে উঠাসহ ৫৫ ভাটার কাউকে পরবর্তী বছরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়নি। তবে ভাটা মালিকরা প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তরে নির্ধারিত নবায়ন ফি জমা দিয়ে অনুমতির চিঠি ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কেউ কেউ হাইকোর্টে রীট আবেদন করে ভাটা চালাচ্ছেন। এ বছরও ২২টি ভাটা হাইকোর্টে রীট মুলে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০১৩ সালে উচ্চ আদালত স্থায়ী চিমনী ভাটা বন্ধ করে দিলেও আদালতের রায় উপেক্ষা করে স্থায়ী চিমনীতে ১৬টি ভাটা চলছে এ উপজেলায়। খোদ উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার দুরত্বে মহাসড়কের পার্শ্বে মকিমপুরে স্থায়ী চিমনীতে আগুন জ্বলে বছরের পর বছর। অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ভাটায় কিছু কয়লা রেখে জ্বালানি কাজে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বনের কাঠ। জ্বালানি কাজে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিকেরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়েই অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ইট। ভাটার ধোঁয়া পরিবেশ নষ্ট করছে এবং ভাটার কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলে ধুলাবালির কারনে এলাকার কোমলমতি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েসহ পথচারীদের শ্বাসকষ্ট জর্নিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়াও প্রতিদিন হাজারো মাহিন্দ্র দিয়ে কৃষি জমির মাটি ভাটায় বহন করা হচ্ছে, ইটভাটাগুলো নির্বিচারে মাটি গিলে, পোড়া ইট বের করা হচ্ছে। ইটভাটার গাড়ি স্কুল কলেজ,হাটবাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং রাস্তাঘাটের বাকল বা ছাল তুলছে। এদের কারনে এলাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, ২০১৯ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুরত্বের কারনে পরিবেশ অধিদপ্তর কাউকে অনুমতি পত্র দিচ্ছে না। ২০২৪ সালে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৮টি ভাটা বন্ধে নোটিশ জারি করেই দায়িত্ব সেরেছেন। এরপর প্রতি বছর এসব ভাটা মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্্ন দিবস ও অনুষ্ঠান পালনের নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। যা ভাগাভাগি হয় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মাঝে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে পীরগঞ্জের ইটভাটাগুলো। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম কুমেদপুর ইউনিয়নে ব্যক্তির এবং পরবর্তীতে মদনখালী ইউনিয়নে ২ টি ভাটায় অভিযান চালিয়েই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ইতি টেনেছেন। যা রীতিমতো রহস্যজনক। এ নিয়ে নানা গুঞ্জনেরও সৃষ্টি হয়েছে ! মুলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসাথে ৪ টি দপ্তর চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। কোন দপ্তরেই ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। সবগুলোতেই একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। দপ্তরগুলো হচ্ছে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ,পৌরসভা কার্যালয়,সহকারি কমিশনার(ভুমি) এর কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়। অভিযোগ রয়েছে,এসব দপ্তরে গুরুত্বপুর্ন কাজের জন্য আসা লোকজন প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দেশের শ্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দেয়া হয়। সঙ্গত কারনেই ওই দপ্তরের কাজগুলো দায়িত্ব এসে পড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর। এর পর পরই পৌরসভাগুলোও বাতিল করে দেয়ায় পৌরসভার মতো জটিল বিভাগের কাজও এসে পড়ে একই ব্যক্তির উপরে। গত বছরের শেষের দিকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি) তকী ফয়সাল তালুকদার দেশের বাইরে চলে যান। যে কারনে ওই বিভাগের দায়িত্বও কাঁধে চাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপরে। এছাড়া নিজের দায়িত্ব তো রয়েছেই। চারটি বিভাগের গুরুত্বপুর্ন ও জটিল কাজগুলো একযোগে দেখাশোনা করা উক্ত কর্মকর্তার জন্য বেশি চাপ হয়েছে। যে কারনে তিনি নাকি প্রায় সময়ই বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনের সাথে অসদাচরন করে থাকেন। অনেকের ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। সংশ্লিষ্টরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মাসের পর মাস অনেকের ফাইল পড়ে আছে উক্ত দপ্তরে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতাও পড়ে আছে কয়েকমাস ধরে। শুধুমাত্র একটি স্বাক্ষরের অভাবে। দেন দরবার করতে গেলে বকাঝকা খেতে হচ্ছে। অনেক ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। মোট কথা জনভোগান্তি কয়েকগুন পর্যন্ত বেড়েছে। সঙ্গত কারনেই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।