ঈদযাত্রার দুর্ভোগ: পরিকল্পনার অভাবে ভোগান্তি কি এবারও থামবে না?

এফএনএস : | প্রকাশ: ২১ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
ঈদযাত্রার দুর্ভোগ: পরিকল্পনার অভাবে ভোগান্তি কি এবারও থামবে না?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা প্রতিবছরই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামের পথে ছুটে যান পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ যানজট ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে, যা ঈদযাত্রাকে আরও অনিরাপদ করে তুলতে পারে। প্রতিবছর যানজট, দুর্ঘটনা, গণপরিবহনের সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে ঈদযাত্রা দুর্ভোগে পরিণত হয়। তবে আশার কথা, এবারের ঈদের ছুটি তুলনামূলক দীর্ঘ হবে। যদি যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া যায়, তবে এ অতিরিক্ত সময় কাজে লাগিয়ে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। প্রতি বছর জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এবারের ঈদযাত্রায় আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ১৪৪৩ জনকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এছাড়া, ৩৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। কিন্তু শুধু গ্রেফতার করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না, বরং নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।  ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ও একটি বড় সমস্যা। বাস মালিকরা প্রায়ই বাড়তি ভাড়া আদায় করেন, যা সাধারণ যাত্রীদের কষ্ট বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি আশ্বাস দিয়েছে যে, এবার তারা অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে কঠোর হবে। তবে অতীতে এ ধরনের আশ্বাস বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই সরকারের পাশাপাশি যাত্রীদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, যা প্রাণহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। গত ৯ বছরে ঈদযাত্রায় ২৩৭৭টি দুর্ঘটনায় ২৭১৪ জন নিহত এবং ৭৪২০ জন আহত হয়েছেন। এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভর করলে হবে না, পরিবহন মালিক, চালক এবং যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা, মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরা নিশ্চিত করাÑএসব বিষয়েও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে এবারের ঈদযাত্রা দুর্ঘটনামুক্ত ও আরামদায়ক করা সম্ভব হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে