দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাস লিকেজ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখন এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই এই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে, অনেকে দগ্ধ হয়ে জীবনভর কষ্ট পাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কারণ দায়ী। অবৈধ গ্যাস সংযোগ, পুরোনো পাইপলাইন এবং নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই এই দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যেমন চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকায় রান্নাঘরের গ্যাস লিকেজ থেকে এক নারীর মৃত্যু এবং চাঁদপুরে একটি পরিবারে গ্যাস বিস্ফোরণে ৬ জনের দগ্ধ হওয়া, এই চিত্রটির সত্যতা আরও স্পষ্ট করে। বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে যে লিকেজ প্রাথমিক কারণ, তা দিনের পর দিন বাড়ছে। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা আসলে অনেক কম, কেননা সিলিন্ডারের ধারণক্ষমতা অনেক বেশি এবং সেগুলি সহজে বিস্ফোরিত হয় না। তবে গ্যাসলাইন লিকেজ থেকে আগুন ধরে গেলে তা বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে, যা একেবারেই বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার, পাইপলাইন এবং সংযোগগুলোর পুরোনো হওয়া, যথাযথ পরীক্ষা না করা এবং সঠিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার না করা এই দুর্ঘটনাগুলির প্রধান কারণ। একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ থাকে, যা নির্দিষ্ট সময় পর পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, অধিকাংশ মানুষ এই নিয়মগুলির প্রতি সচেতন নন। নীচু মানের সিলিন্ডার এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সেগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করা, এবং রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় গ্যাস জমে গিয়ে কোনো ছোট্ট স্পার্কেও আগুন লাগতে পারে। গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পুরোনো গ্যাসলাইন পরীক্ষা করা এবং অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা দরকার। সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করা, উচ্চমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা, এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। পাশাপাশি রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ঠিক রাখার গুরুত্বও অনেক বেশি, যাতে গ্যাস জমে গিয়ে বিপদ সৃষ্টি না করে। গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ভুল এবং সচেতনতার অভাবেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে কিছু নির্দিষ্ট গ্যাস ডিটেক্টর বা সাবান পানির মাধ্যমে লিকেজ পরীক্ষা করা সম্ভব, যা অনেকাংশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। গ্যাসের লিকেজ নিয়ে অনেকেই সাধারণভাবে ধারণা করেন, যে কোনো স্পার্ক বা ম্যাচের কাঠি থেকেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, যা ভয়াবহ পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।