মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার: যুব সমাজের জন্য অশনিসংকেত

এফএনএস | প্রকাশ: ৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪৯ এএম
মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার: যুব সমাজের জন্য অশনিসংকেত

বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান রুটের (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, গোল্ডেন ওয়েজ, গোল্ডেন ভিলেজ ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট) সরাসরি প্রভাবে বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে ভয়ংকর সব মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে, যা জল, স্থল ও আকাশ পথে নিরবিচারে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের শহর-নগর, পাড়া-মহল্লায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ফেনসিডিল, ইয়াবা, কোকেন, ক্রিস্টাল মেথ-আইস, কুশ, খাট, ডিওবিসহ সব ধরনের মাদক সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। এমনকি হোম ডেলিভারির মাধ্যমেও মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে মাদকাসক্তের নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি সংস্থা ‘মানস’-এর তথ্যমতে, দেশে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছে, যার মধ্যে এক কোটি ব্যক্তি নিয়মিত মাদক গ্রহণ করে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, যা যুব সমাজের জন্য এক ভয়ংকর সংকেত। মাদক চোরাচালান ও পরিবহনের কাজে শিশু ও নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৭৫ শতাংশ মাদকাসক্ত। গড়ে প্রতি ১২ জনে একজন মাদকসেবী এবং একজন মাদকসেবী বছরে ৫৬ হাজার টাকা মাদকের পেছনে ব্যয় করে, ফলে দেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা মাদকের পেছনে অপচয় হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭৫ জন মাদকাসক্ত সরকারি ও বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিশেষ করে নারী ও কিশোর মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাদক সংক্রান্ত ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৫টি মামলায় ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ পিস ইয়াবা, ১ কোটি ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৮ বোতল ফেনসিডিল ও ৩২ লাখ ৮ হাজার ৪২৭ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে। ৮০ শতাংশ মাদকাসক্ত কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সীমান্তে কড়া নজরদারি, আইন প্রয়োগে কঠোরতা, মাদক চোরাচালান রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পুনর্বাসন কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিবার ও সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, তরুণদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর আইন প্রয়োগ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিক্ষা ও পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা মাদক সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি হতে পারে।