সীমান্ত অস্থিতিশীলতা ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এফএনএস | প্রকাশ: ৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪৯ এএম
সীমান্ত অস্থিতিশীলতা ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অস্থিরতা এবং আরাকান আর্মির তৎপরতা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাখাইন দখলের পর থেকে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকায় নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। নাফ নদে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলে ও নৌযান অপহরণ করছে, মুক্তিপণ দাবি করছে এবং সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সীমান্ত বাণিজ্যে কমিশন দাবি করে তারা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা আমদানি বিমুখ হয়ে পড়ছেন, যা অর্থনৈতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সংঘর্ষ আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে নতুন করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশকে চাপের মুখে ফেলেছে। সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরাকান আর্মির পাশাপাশি মিয়ানমারের নৌবাহিনীর কার্যক্রমও উদ্বেগজনক। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জেলেদের ট্রলার লুট এবং নৌবাহিনীর হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এসব ঘটনার পরও মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে। একই সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অস্থিরতা নিরসনে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।