প্রযুক্তির উন্নয়ন বনাম কর্মসংস্থান: সংকট নাকি সম্ভাবনা?

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
প্রযুক্তির উন্নয়ন বনাম কর্মসংস্থান: সংকট নাকি সম্ভাবনা?

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে শিল্প খাতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দেশের প্রায় ১৮ লাখ কর্মজীবী চাকরি হারাতে পারেন বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশেষত, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়াসামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্পের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। একদিকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কারখানাগুলো প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, অন্যদিকে এর ফলে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা কমছে। গবেষণা বলছে, শুধুমাত্র তৈরি পোশাক খাতেই ১০ লাখ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে। কারণ, আধুনিক মেশিন এখন অল্প সময়ে অধিক কাজ করতে সক্ষম, যা আগে বহু শ্রমিকের সমন্বয়ে সম্পন্ন করা হতো। তবে এই সংকট এড়ানোর উপায় রয়েছে। গবেষক ফারহিন ইসলামের মতে, যেসব খাতে প্রযুক্তি মানুষের কাজের সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে ছাঁটাইয়ের হার কম হবে। কিন্তু যেখানে প্রযুক্তি সরাসরি শ্রমিকের বিকল্প হয়ে উঠছে, সেখানে ছাঁটাইয়ের হার বেশি হবে। তাই শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাত দিন দিন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, আধুনিক মেশিন উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে খরচ কমাতে সহায়ক হচ্ছে। আগে যেখানে ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিক একদিনে যে কাজ করতেন, এখন একজন শ্রমিক আধুনিক মেশিনের সাহায্যে তা সম্পন্ন করতে পারছেন। এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক মনে করা হলেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক না কেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া শিল্প খাতে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। ডিজিটাল করপোরেশনের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার মো. রাকিবের মতে, সাপ্লিমেশন মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক এক সপ্তাহে যে কাজ করতেন, তা এখন এক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হচ্ছে। একইভাবে, সোয়েটার তৈরিতে ব্যবহৃত ম্যানুয়াল মেশিনের জায়গা নিয়েছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন, যা একজন অপারেটরকে একসঙ্গে ১০টি মেশিন পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছে। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা যেমন দেশের শিল্প খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে, তেমনি বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে। তাই সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে শ্রমিকরা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। শিল্প খাতে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করাই হবে সময়ের দাবি।