মার্চ মাসের অন্ধকার চিত্র: নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা কোথায়?

এফএনএস | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
মার্চ মাসের অন্ধকার চিত্র: নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা কোথায়?

বাংলাদেশের নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মার্চ মাসের প্রতিবেদনে উঠে আসা পরিসংখ্যানটি যেন এক রক্তাক্ত আয়না, যেখানে সমাজের অসহিষ্ণুতা, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা এবং বিচারহীনতার চেহারাটি স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। মাত্র এক মাসে ২৪৮ জন কন্যা এবং ১৯৪ জন নারীসহ মোট ৪৪২ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি নারী নিপীড়নের এক করুণ ও নির্লজ্জ বাস্তবতা। ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধেই আক্রান্ত হয়েছে ১৬৩ জন নারী ও কন্যা। তার মধ্যে ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ২ জন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা প্রশ্নে সমাজ, প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এখনো গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। উত্ত্যক্তকরণ, যৌন নিপীড়ন, অপহরণ, নারী পাচার, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য হত্যাÑএই সমস্ত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, নারী নির্যাতন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সামাজিক ব্যাধি যা প্রতিনিয়ত বিস্তার লাভ করছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও চিত্রটি ভীতিকরÑ১২৫ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার, ৫৫ জন হত্যার শিকার কিংবা চেষ্টা, ৯ জনের রহস্যজনক মৃত্যু, এমনকি বাল্যবিবাহের চেষ্টার মতো ঘটনা এখনো আমাদের সমাজে ঘটছে! এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে উত্তরণের পথ কী? শুধুমাত্র আইন করে কিংবা বিচারিক হুঁশিয়ারি দিয়ে এসব অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়, যদি না আমরা সমাজে মানসিক পরিবর্তন আনতে পারি। প্রয়োজন পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি, লিঙ্গ সংবেদনশীল শিক্ষা, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া এবং সাইবার ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নারীবান্ধব উপস্থাপন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভুক্তভোগীরা যেন আইনের আশ্রয় পেতে সাহস পান, এবং বিচার যেন হয় কার্যকর ও দৃশ্যমান। কোনো ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় ‘সমঝোতা’ বা ‘সামাজিক চাপ’ যেন আর বিচারপ্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। আমরা যদি এখনই পরিবর্তনের পথে না হাঁটি, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব এক ভয়াবহ, নারীবিদ্বেষী ও সহিংস সমাজ। এখনই সময়Ñজেগে ওঠার, রুখে দাঁড়ানোর, আর নারীর প্রতি প্রতিটি নিপীড়নের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার।