ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় গত ৮ এপ্রিল থেকে জাটকা সংরক্ষন সপ্তাহ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। রঙ বেরঙের বেলুন উড়িয়ে নৌ-র্যালি, হাট বাজারে জারীসারী গান পরিবেশ, নদীতে সাতার প্রতিযোগীতা সহ নানা রঙের ব্যানার দিয়ে ঘেরা হয়েছে উপজেলা পরিষদ ভবন। কিন্তু পদ্মা নদী অধ্যুষিত অত্র উপজেলা প্রশাসন সপ্তাহ জুড়ে জাটকা সংরক্ষনের জন্য এতো ঢাকঢোল পেটালেও বাস্তবে নদীতে দিনরাত চলছে অবাধে জাটকা নীধনের মহড়া।
এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে উপজেলা মৎস্য অফিসার নাঈম হাসান বিপ্লবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,“সপ্তাহ জুড়ে আমরা জাটকা সংরক্ষনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করে চলেছি। একই সাথে বিভিন্ন হাট বাজারে আমরা অভিযানও চালাচ্ছি”। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন বলেন, “ পদ্মা নদীতে বড় বড় বেড়জাল দিয়ে জাটকা নীধন করা হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। তিনি বলেন, খুব শীগ্রই আমি পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করবো”।
বুধবার দুপুরে উপজেলা পদ্মা নদীতে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পদ্মা নদীর দিয়ারা গোপালপুর জলমহাল, চর কল্যানপুর জলমহাল, চর কালকিনিপুর, চর তাহেরপুর, চর মির্জাপুর, চর শালেপুর, উত্তর শালেপুর, ভাটি শালেপুর, চর হাজীগঞ্জ মৌজা, চর মোহনমিয়া, মাঝিকান্দি, চরহরিরামপুর, চর ঝাউকান্দা, চর হোসেনপুর, জাকেরের সুরা জরমহাল, হাজীডাঙ্গী গ্রাম মাথাভাঙ্গা ও চর মঈনট জলমহলে দিনরাত চলছে জাটকা ইলিশ নিধনযজ্ঞ। পদ্মা নদীর এসব জলমহালে এক হাজার মিটার আয়তনের প্রতিটি কারেন্ট জাল ও বড় বড় বেড়জাল সহ ট্রলারযোগে দিনরাত নীধন করা হচ্ছে জাটকা ইলিশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জেলেদের এনে তাদের নৌকা জাল বানিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দাদন ব্যাবসায়ী। স্থানীয় কিছু দাদন ব্যাবসায়ী ওইসব অসাধু জেলেদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে পদ্মা নদীতে জাটকা সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মৎস্য শিকার করেন। প্রতিদিনের বিক্রিত মাছের ৪০ শতভাগ দাদন ব্যাবসায়ী ও ৬০ শতভাগ জেলেরা নিয়ে থাকেন।
বুধবার দুপুরে উপজেলা পদ্মা নদীর চরঝাউকান্দা জলমহালে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা শিকারী ফরমান মন্ডল (৫০) জানায়, “ তার বাড়ী পাবনা জেলায়। পদ্মা নদীর চরমঈনট ঘাটের আড়ৎদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধার ছেলে হাসান মৃধার অধীনে সে অত্র উপজেলায় বসবাস করছে এবং পদ্মা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ শিকার করে জীবীকা অর্জন করছে। আরেক জেলে সুজন হলদার (৪৫) জানায়,“ আমরা আড়ৎদার মোরাদ হোসেন মৃধার অধীনে পদ্মা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরি। কিছুদিন আগে জালে প্রচুর পরিমান জাটকা আটকা পড়েছিল এখন মাছ একটু কমে গেছে। আর কারেন্ট জাল ব্যাবহার নিষিদ্ধ তা তার জানা নাই বলে জানায় ”।
আর চরমঈনটের আড়ৎদার মোরাদ হোসেন মৃধা (৬৩) জানায়, “ভাই, পদ্মা নদীতে আমার অধীনে এখন মাত্র ৭/৮ খানা নৌকা আছে । কিন্তু অন্যান্য আড়ৎদারের অনেক বেশী পরিমান নৌকা ও জাল পদ্মা নদীতে মাছ ধরে থাকে”।