শিক্ষা আইনহীনতা: স্বার্থের সংঘাতে জিম্মি জাতির ভবিষ্যৎ

এফএনএস | প্রকাশ: ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
শিক্ষা আইনহীনতা: স্বার্থের সংঘাতে জিম্মি জাতির ভবিষ্যৎ

একটি জাতির অগ্রগতির ভিত্তি হয় শিক্ষা, আর শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হয় একটি শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী আইন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই মৌলিক কাঠামোই নেই বললেই চলে। ২০১১ সালে শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর এক যুগের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু আজও এ আইন আলোর মুখ দেখেনি। অথচ এই সময়ের মধ্যে সরকারের বহুবার মেয়াদ শেষ হয়েছে, মন্ত্রিত্ব বদলেছে, খসড়া বদলেছেÑবদলায়নি শুধু নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছার অভাব। এত বছরের গড়িমসি কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি অসৎ সিন্ডিকেটÑনোটবই ব্যবসায়ী, কোচিং মালিক, এবং সুবিধাবাদী কিছু শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছে এমন একটি বলয়, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করে। আর এই বলয়কেই সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তৎকালীন সরকার একের পর এক ‘খসড়া’র মোড়কে শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি ঝুলিয়ে রেখেছে। নতুন খসড়ায় নোট-গাইড নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব থাকলেও সঙ্গে সঙ্গেই 'সরকার অনুমোদিত সহায়ক বই'র নামে সেই নিষেধাজ্ঞাকে নরম করে ফেলা হয়। একদিকে শিক্ষার্থীদের চাপমুক্ত রাখতে চাই, অন্যদিকে সেই চাপের উৎসকে বৈধতা দিচ্ছিÑএ কেমন দ্বিচারিতা? শুধু তাই নয়, প্রাইভেট টিউশন, কোচিং, এবং শিক্ষকদের দ্বৈত ভূমিকা সম্পর্কেও খসড়ায় নানা বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং সময়ের ব্যবধানে এই অনিয়মগুলোকেই আইনগতভাবে ধোয়া-মোছার পাঁয়তারা করা হয়েছে। এই অবস্থায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা চৌধুরীর মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং কোচিং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সম্ভাব্য আঁতাতের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এই বক্তব্য একদিকে যেমন বাস্তবতার প্রতিফলন, তেমনি তা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কসংকেত। আমরা মনে করি, শিক্ষা খাত নিয়ে দীর্ঘদিনের অবহেলা জাতিকে এক ভয়াবহ দুর্দিনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আইনের অভাবে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবকÑসবাই চলছে নিজস্ব নিয়মে, যার প্রভাব পড়ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর। এ অবস্থায় প্রয়োজন একটি বাস্তবমুখী, দৃঢ় এবং রাজনৈতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ উদ্যোগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবিÑশিক্ষা আইনকে আর কালক্ষেপণ না করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করুন, সংসদে পাস করুন এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। শিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা আর নয়। একটি জাতিকে বাঁচাতে হলে, আগে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে সুস্থ করতে হবে।