মানব পাচারের অপরাধ বাড়লেও কমেছে অপরাধীদের সাজার হার

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
মানব পাচারের অপরাধ বাড়লেও কমেছে অপরাধীদের সাজার হার

দেশে মানব পাচারের অপরাধ বাড়লেও কমেছে অপরাধীদের সাজার হার। গত ছয় বছরে মানব পাচারের ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো মামলা হয়েছে। আর ওসব মামলার আসামি প্রায় ২০ হাজার। কিন্তু ওসব মামলায় ১ শতাংশেরও কম দশমিক ৮১ শতাংশ সাজা হয়েছে। আর ওই সময় অন্তত ৭২ বাংলাদেশী অবৈধ পথে বিদেশে যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের দুর্বল তদন্তের কারণে মানব পাচার মামলায় সাজা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, সাক্ষী না পাওয়া এবং দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীরা মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ভুক্তভোগী, আদালত ও পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগমানব পাচারের ঘটনায় দায়ের মামলাগুলো মনিটরিং করে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৫৪৬টি মানব পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাতে ১৯ হাজার ২৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ১৫৭ জনের সাজা হয়েছে। তার মধ্যে ২৪ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩৩ জনকে অন্যান্য মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ওসব মামলায় গুরুতর অভিযোগ থাকলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। আর গত ছয় বছরে মানব পাচারের মামলায় ৩ হাজার ১৪১ জন খালাস পেয়েছে। তার মধ্যে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আসামি খালাস পেয়েছে।

সূত্র জানায়, মানব পাচার মামলায় বিচার না হওয়ায় পাচারকারীরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশের দুর্বল তদন্তের কারণে মানব পাচারের অধিকাংশ মামলাতেই আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তারা বিচারের সময় সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করে না। আবার ওসব মামলার তদন্তে আগে যেমন নজরদারির ব্যবস্থা ছিল, এখন সেটা নেই। ফলে পুলিশ যেমন তেমন তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে দেয়। আর পুলিশের ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয় না বলেই খালাস পেয়ে যায় আসামিরা। এভাবেই দেশে একদিকে যেমন মানব পাচারের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনই অপরাধীদের সাজার হারও কমে আসছে। আর সাজার হার খুব সামান্য হলেও অবৈধ পথে বিদেশে যেতে গিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

সূত্র আরো জানায়, বিদেশে যাওয়ার চাহিদা বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্রমান্বয়েই বাড়ছেই। আর তা পুঁজি করে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র নানা কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করছে। আর এখানে মানবপাচারের মামলাগুলোর বেশির ভাগই প্রতারণাসংক্রান্ত। আবার দেখা যায় বিচার চলা অবস্থায়ই বাদী ও বিবাদী পক্ষ আপস করে ফেলছে। ফলে একটা পর্যায়ে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। 

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, যথাসময়ে সাক্ষী হাজির না হওয়া মানবপাচারের মামলাগুলোর অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আবার অনেক সময় দেখা যায়, বাদী-বিবাদী নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলেন। কোনো পক্ষ দেশের বাইরে থাকলেও বিচারের প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়। জিম্মি হওয়া ব্যক্তি যদি দেশের ভেতরে থাকে তাহলে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে দেশের বাইরে ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে।