চট্টগ্রাম বন্দর ভিত্তিক বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯০ বিঘা জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসব জমির আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
একইসঙ্গে আদালত সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি সাদ্দাম হোসেন, ‘কাজের মেয়ে’ মর্জিনা বেগম, আলমাছ আলী, বেদারুল ইসলাম এবং টপটেন ট্রেডিং হাউজ ও গোল্ড স্টার ট্রেডিং হাউজের নামে থাকা ৬৬টি ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন। এসব হিসাবে জমা রয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার ২২১ টাকা। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
উল্লেখিত দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং (অর্থপাচার) সংক্রান্ত অভিযোগে একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তে ওঠে এসেছে, তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ভুয়া নাম ব্যবহার করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেন এবং এ অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। দুদকের ভাষ্যমতে, অনুসন্ধান চলাকালে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই এসব সম্পদ ক্রোক করা জরুরি হয়ে পড়ে। এদিকে একইসঙ্গে এস আলম ও আকিজসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানের নামে থাকা ৬৬ ব্যাংক হিসার জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে দুদকের করা আবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক ডিএমডি মো. আকিজ উদ্দিন (এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব) ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এস আলমের কাজের মেয়ে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী মো. সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এস আলম গ্রুপ ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে ভুয়া ঋণ ও বিনিয়োগ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
তারা মানি লন্ডারিং অপরাধ সংগঠন করে বিদেশে টাকা পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যার ফলে দুদক আশঙ্কা করছে, এসব অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টাও চলছে। তাই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১০ ও ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭-এর ১৮ ধারার আওতায় ব্যাংক হিসাবগুলো অবিলম্বে ফ্রিজ করা প্রয়োজন।