আগৈলঝাড়া ইউএনও বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগে অপপ্রচার

এফএনএস (এস এম ওমর আলী সানি; আগৈলঝাড়া, বরিশাল) : | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আগৈলঝাড়া ইউএনও বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগে অপপ্রচার

সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আদায়, নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না হয়ে অফিস ফাঁকি দেয়াসহ বিস্তার অভিযোগে তিনজন কর্মচারীকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিলো। এতেও তারা সংশোধন না হওয়ায় অবশেষে ওই তিন কর্মচারীকে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

পাশাপাশি স্থানীয় এক যুবদল নেতার অবৈধ ড্রেজারে অভিযান পরিচালনা করে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট ফারিহা তানজিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শোকজ পাওয়া ওই তিন কর্মচারী এবং অর্থ দন্ডপ্রাপ্ত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে হয়রানি ও সামাজিক যোগাযোগে অপপ্রচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুরো আগৈলঝাড়া উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউএনওকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ও অসাধু কর্মচারিদের বিচার এবং অপসরনের দাবিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।

 অফিস ও স্থানীয়  সূত্রে  বৃহস্পতিবার জানাগেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মতিউর রহমান মোল্লা রহস্যজনক কারণে (২০.১০.২০২৪ থেকে ২৬.১২.২০২৪) পর্যন্ত একটানা ৬৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। অনেকের প্রশ্ন ৮ম শ্রেণী পাস একজন লোক কি করে অফিস সহকারী হয়। সে ভালো করে বাংলা লিখতে পারে না। একইভাবে অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার ও বিলকিস আক্তারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকির পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের বিস্তার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সেবাগ্রহীতারা ইউএনওকে অবহিত করেন। তাদের তিন জনকেই প্রাথমিকভাবে মৌখিকভাবে সর্তক করা হয়। এতেও তারা সংশোধন না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন অতিসম্প্রতি তাদের তিনজনেই শোকজ করেন। এরপরই ওই তিন কর্মচারী ইউএনও’র ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর পূর্বে দুইজন ইউএনও’র মতিউর রহমান মোল্লা ও আমির আলী হাওলাদারকে একাধিকবার লিখিতবার শোকজ করেছিলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের কয়েকজন কর্মচারীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অফিস সহকারী মতিউর রহমানের ক্ষমতার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সর্বদা তটস্থ ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অফিস থেকে পালিয়ে যায় ফ্যাসিষ্টের দোসর মতিউর। তারা আরও বলেন, স্থানীয় এক যুবদল নেতার ছত্রছায়ায় সেই মতিউর রাতারাতি ভোল্ট পাল্টিয়ে এখন নিজেকে বিএনপির নির্যাতিত কর্মী দাবি করে আবার অফিসে দাপট দেখাতে শুরু করেছে। তার অবৈধ সুযোগ সুবিধা না দেয়ার কারণেই তিনি ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে।

স্থানীয় সৈকত বাড়ৈ, হাসিব মোড়ল বলেন, আমরা জন্ম সনদ করতে, আগৈলঝাড়া আসলে  ই্উএনও অফিসের অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার আমাদের কাছছে টাকা দাবি করে।

তারা আরও জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনপূর্বে উপজেলার রাজিহার গ্রামের আবুল হোসেন ফকিরের ছেলে আব্দুর রহিম ফকির তার পুকুর থেকে ড্রেজারে দিয়ে বালুউত্তোলন করছিলো। ইউএনও অভিযান পরিচালনা করে পুকুর মালিককে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেন। (৩১.১২.২০২৪)। একারনে আব্দুর রহিম ফকিরের লোকজন ইউএনও’র উপরে ক্ষিপ্তহয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

এবিষয়ে অভিযুক্ত মতিউর রহমান, এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে আমির আলী হাওলাদার বলেন, আমাকে বিগত ইউএনও’রা  শোকজ করেছিলো এ কথা সত্য। আমি একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম তা স্যারে কথায় ফেরত দিয়েছি।

সার্বিক বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি অফিস কর্মচারীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এবং স্থানীয় এক অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী কর্তৃক ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার কারণেই তারা সম্মিলিতভাবে তাদের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে সেই অফিস কখনও দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন একজন কর্মচারী তার অফিস প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে এধরনের বক্তব্য দিতে পারেনা। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে