স্বামীর বাসায় চার মাসের সন্তান রেখে বাবার বাসায় মা

এফএনএস (বাগমারা, রাজশাহী)
| আপডেট: ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
স্বামীর বাসায় চার মাসের সন্তান রেখে বাবার বাসায় মা
কোলে চার মাসের শিশু সন্তান। এক হাতে দুধের ফিডার। চোখ মুখে বিষন্নতা। এভাবে ছুটে চলেছেন কখনো থানায় আবার এলাকার মাতবর শ্রেণির লোকজনের কাছে। মাহমুদ হাসানের (২২) এরকম অবস্থা চলছে গত চার দিন ধরে। তিনি রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কর্ণিপাড়ার গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। তাঁর অভিযোগ বিপদে ফেলে সুবিধা আদায়ের জন্য স্ত্রী রোকসানা খাতুন (২৭) চার মাসের কন্যাশিশুকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। তবে উল্টো কথা বলেছেন স্ত্রী রোকসামা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাগমারা থানার মোড়ে চার মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এক তরুণ ও মাঝ বয়সী এক নারীকে চোখে পড়ে। তাঁরা সম্পর্কে পরস্পরের মা ও ছেলে। আর কোলে থাকা শিশুটি তরুণের সন্তান। থানা থেকে বেরিয়ে এসে শোনালেন তাদের গত কয়েকদিন ধরে থানা পুলিশের কাছে ধর্ণা দেওয়ার কারণ। কল্পনা বিবি (৪৫) জানান, দেড় বছর আগে তার ছেলে মাহমুদ হাসান একই গ্রামের রোকসানাকে (২৭) পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। তবে এই বিয়ে শুরুতে মেনে নেয়নি উভয়ের পরিবার। মাহমুদ হাসান স্ত্রীকে নিয়ে পাশের এক গ্রামে বসবাস করেন। এদিকে পাঁচমাস আগে রোকসানা তাঁর বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তাঁকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা লিগ্যাল এইড রাজশাহী দপ্তরে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩ মার্চ রোকসানা দম্পতির মধ্যে মীমাংসা করে দেন রাজশাহী লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোঃ আরিফুল ইসলাম। সে থেকে রোকসানা শ্বশুরবাড়িতে সন্তানসহ একসঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। এদিকে গত ৪ এপ্রিল স্বজনদের প্ররোচনায় রোকসানা খাতুন চার মাসের কন্যা শিশু মদিনা খাতুনকে স্বামীর বাড়িতে রেখে বাবার বাড়িতে চলে আসেন বলে অভিযোগ করা হয়। ওই দিনই শিশুর কাছে মাকে ফিরে পেতে থানায় অভিযোগ দেন শিশুর দাদি কল্পনা বিবি। পাশাপাশি টাকা ও গহনা নিয়ে যাওয়ায়ও অভিযোগ আনা হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে মোহরানার দুই লাখ টাকা দাবি করেন ছেলের বউ। কয়েকজন স্বজনের প্ররোচনায় রোকসানা শিশু কন্যাকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এদিকে চার মাসের শিশুকন্যা মদিনা খাতুনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাহমুদ হাসান। তিনি জানান, মা চলে আসার পর মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মায়ের দুধের প্রয়োজন হওয়াতে বিকল্প হিসেবে বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়াচ্ছেন। মেয়ে কান্নাকাটি করছে। মায়ের কাছে শিশু কন্যাকে দেওয়ার এবং বাড়তি ফিরে আনার চেষ্টা করছেন। গ্রামের প্রধানদের কাছেও ধর্না দিচ্ছেন। পুলিশের কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিয়ের সময় দুই লাখ টাকার মোহরানা করা হয়েছে, স্ত্রী এখন ওই টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন দিয়েছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, সবাই ছেলেদের দোষ খোঁজে। তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন। মাহমুদ হাসানের মা কল্পনা বিবি বলেন, তাঁর ছেলে ভালোবেসে স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে বিয়ে করার কারণে প্রথমে মেনে নেননি। পরে মেনে নিয়েছেন। এখন তাদের মানসিক চাপে রেখেছেন। তিনি নাতনিকে মায়েক কোলে দেওয়া এবং ছেলের বউকে বাড়িতে আনার চেষ্টা করেও পারেননি। তবে উল্টো কথা বলেছেন রোকসানা খাতুন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে মেরে ও শিশুকন্যাকে কেড়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। শিশু সন্তানকে রেখে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বলেও জানান। তাঁকে মেরে ও শিশু সন্তানকে রেখে তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানান। বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে টাকা ও গহনা নিয়ে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে শিশু কন্যাকে রেখে যাওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এটা পারিবারিক বিষয় হওয়াতে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।