ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে রাজধানী ঢাকায় বিশাল র্যালি ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে অংশ নেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণ।
বিএনপি নেতারা জানান, গাজা ও রাফায় ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বর হামলা ও শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষের ওপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দলটির নেতারা বিশ্ববাসীকে এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং মুসলিম বিশ্বের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, "ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা শুধু একটি জাতির ধ্বংস নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বকে নিঃশেষ করার গভীর ষড়যন্ত্র। মুসলিম বিশ্ব যদি ঐক্যবদ্ধ হতো, তাহলে ইহুদিবাদী ইসরায়েল এতদূর যেতে পারত না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর সরাসরি অথবা পরোক্ষ সমর্থনে বহু বছর ধরেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। অথচ মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা নির্বিকার। বিশ্বব্যাপী আন্দোলন থাকলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “বর্তমান সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, এমনকি আড়িপাতার যন্ত্র কেনা হয়েছে তাদের কাছ থেকে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যারা এই কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তারা ফিলিস্তিনের শত্রুদের পক্ষেই কাজ করছে। তাই তাদের শান্তিপূর্ণভাবে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আজ গাজা যেন বন্দি এক খাঁচা। আন্তর্জাতিক মহলের উচিত এই বর্বরতাকে রুখে দেওয়া। স্বাধীনতার মাসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন—সেই ঐতিহ্য আজও বিএনপি ধরে রেখেছে।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নারকীয় গণহত্যা চলছে। অথচ জাতিসংঘ চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দেশের সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কোথায়?”
বিকেল চারটায় শুরু হওয়া সমাবেশের পর নয়াপল্টন থেকে শুরু হয় সংহতি র্যালি। র্যালিটি শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হয়। সারা পথজুড়ে ছিলো ব্যাপক জনসমাগম ও উদ্দীপ্ত স্লোগান। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা, কালো ব্যানার নিয়ে নেতা-কর্মীরা সোচ্চার ছিলেন—“গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো”, “ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো”, “জাতিসংঘ জবাব দাও” প্রভৃতি স্লোগানে।
বিএনপির এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, এ প্রতিবাদ বিশ্ববাসীকে বার্তা দিয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে। এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ, কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান।