বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন তার বাবা বদরুল আলম। এ বিষয়ে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন, যাতে আদালত জানতে চেয়েছে, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার এবং আটকের প্রক্রিয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।
গত ১৩ এপ্রিল রিট আবেদনটি শুনানি করে বিচারপতি রাজিক আল জলিল এবং বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল দেন। হাইকোর্ট আদেশে জানায়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে হবে।
গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এর পর দিন, ১০ এপ্রিল, মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ জারি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তারির সময় মেঘনা ফেসবুক লাইভে ছিলেন এবং পুলিশ পরিচয়ধারী কয়েকজন ব্যক্তি তার বাসার দরজা ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
হাইকোর্টে মেঘনার বাবা বদরুল আলম তার মেয়ের গ্রেপ্তারি ও আটকের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, মেঘনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় এই আটকাদেশ আইনগতভাবে অবৈধ।
এদিকে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে মেঘনা আলমের আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পুলিশ যেভাবে মেঘনাকে আটক করেছে, তা সঠিক হয়নি এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ থাকলে, সেগুলো মীমাংসা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
মেঘনা আলম ২০২০ সালে 'মিস আর্থ বাংলাদেশ' প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন এবং 'মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন' নামে একটি অলাভজনক সংস্থার চেয়ারম্যান। তার গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক এবং পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাইকোর্টের রুলে মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করার সময় পরোয়ানা ছাড়া তার বাসায় প্রবেশ, গ্রেপ্তারের কারণ জানানো না এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় গোয়েন্দা কার্যালয়ে হেফাজতে রাখার বিষয়ে আইনি কর্তৃত্বের সীমা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, মেঘনা আলমের আটকাদেশ কতটুকু আইনগত এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী হতে পারে? এই বিষয়ে আইনজীবীরা মনে করছেন, যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তবে মেঘনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে তাকে আটক করা, যে কারণে এটি স্পষ্টভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
অবশ্য, মেঘনার বাবা বদরুল আলম অভিযোগ করেছেন, তার মেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং এই কারণে তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া তিনি দাবি করেছেন যে, সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্কের কারণে এটি ঘটেছে।
এদিকে, আদালতের রুলের পর এই বিতর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং মেঘনা আলমের আইনগত অধিকার রক্ষায় সিদ্ধান্তের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।