ট্রলার গেল, প্রাণ ফিরল: আরাকান আর্মির জিম্মা থেকে মুক্ত ৫৫ জেলে

এফএনএস (বলরাম দাশ অনুপম; কক্সবাজার) :
: | আপডেট: ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম : | প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
ট্রলার গেল, প্রাণ ফিরল: আরাকান আর্মির জিম্মা থেকে মুক্ত ৫৫ জেলে

সাগরের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে অবশেষে নিজের মাটিতে পা রাখলেন ৫৫ জন বাংলাদেশি জেলে, যাদের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) দীর্ঘ কূটনৈতিক ও সীমান্ত পর্যায়ের চেষ্টার ফলেই বুধবার (১৬ এপ্রিল) তাদের দেশে ফেরানো সম্ভব হয়।

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া সংলগ্ন ট্রানজিট জেটিঘাটে বিজিবির তত্ত্বাবধানে ওই জেলেদের হস্তান্তর করা হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের সঙ্গে থাকা মাছ ধরার বোট ও জাল আর ফেরত মেলেনি। আরাকান আর্মি এই সরঞ্জামগুলো আটকে রেখেছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, "আটককৃত জেলেদের দেশে ফেরানোর জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছি। দীর্ঘ আলোচনার পর আজ তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন জেলেদের তথ্য সংগ্রহ করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।"

প্রত্যাবর্তনকারী এই জেলেদের মধ্যে অনেকেই টেকনাফ কায়ুকখালী ঘাটের। স্থানীয় বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, “আমারও ছয়জন মাঝিমাল্লা ছিল তাদের মধ্যে। তারা ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু আমার ট্রলার ও জাল ফেরত মেলেনি। প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমাদের।”

এই ঘটনা আবারও তুলে ধরল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেদের অনিরাপদ অবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা। ভুলবশত সীমান্ত অতিক্রম করে গেলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেটাই দেখিয়েছে এ ঘটনা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “বিজিবির প্রচেষ্টায় জেলেরা নিরাপদে দেশে ফিরেছে, এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমরা এখন চেষ্টা করছি কীভাবে জব্দ হওয়া ট্রলার ও জাল ফেরত আনা যায়।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দ্রুত মেরিটাইম সীমান্তে জেলে সচেতনতা বৃদ্ধি, জিপিএস ব্যবহারের পরামর্শ এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয় দরকার। এছাড়া আরাকান আর্মির মতো গোষ্ঠীর হাতে যেন জেলেরা সহজে না পড়ে, সে জন্য প্রয়োজন জলসীমা নিরীক্ষা ও নজরদারি আরও জোরদার করা।

আবারও প্রমাণ হলো, প্রাণ বাঁচানো গেলেও জীবিকার যন্ত্রপাতি হারালে ক্ষতির ভার অনেক বড়। বিজিবির প্রচেষ্টা প্রশংসিত হলেও এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সমাধান তখনই হবে, যখন জেলেদের নিরাপত্তা ও মালিকানাসম্পন্ন সম্পদ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW