দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে বেলা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। আলোচনার পর আমনা বালুচ বলেন, “আলোচনাটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “ঢাকায় এসে আমি আনন্দিত, খাবার ও কেনাকাটা ভালো লেগেছে, আর আলোচনাও ছিল গঠনমূলক।”
এটি ছিল ২০১০ সালের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনা। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক পারস্পরিক বোঝাপড়া ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হতে পারে।
আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, আকাশপথে সরাসরি ফ্লাইট চালু, আমদানি-রপ্তানির সম্ভাবনা এবং ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়াদি আলোচনায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এখনও পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১ পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক হিস্যা বাবদ প্রায় ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ অর্থ, সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, সঞ্চয়পত্র এবং রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় আটকে থাকা অর্থ।
পরিকল্পনা কমিশনের মতে, সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা ৯০ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকাসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ পাবে প্রায় ৬০ কোটি রুপি।
বিশ্লেষক শাহাব এনাম বলেন, “পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিবের এই সফর বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিকভাবে ইতিবাচক বার্তা বহন করে। যদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে তা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।”
চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার-এর ঢাকা সফরও নির্ধারিত হয়েছে। ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।