অবকাঠামোগত উন্নয়ন,ভোগ বিলাস ও প্রযুক্তি ইত্যাদির দোহাই দিয়ে বাড়ছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা ও কল কারখানা। কমে যাচ্ছে আবাদি জমি, প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার পরিবেশ ও কল কারখানার রাসায়নিকে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে নদ নদী। যার কারণে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাদেশের পরিবেশ আজ বিপন্ন। এই বিপন্নের কারণে হুমকির মুখে প্রাণীকূলের স্বাস্থ্য। এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ভাবছেন ফটো সাংবাদিক সনি রামানি৷ আর সেই ভাবনা থেকেই গত আট বছর যাবত ক্যামেরার ফ্রেমে ফ্রেমে বুনেছেন বিপন্ন পরিবেশ ও প্রকৃতির গল্পগুলো। ক্যামেরার নান্দনিকতায় তুলে এনেছেন পরিবেশের দূরবস্থা। তুলে ধরেছেন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়া প্রকৃতির বদলে যাওয়া রূপ। হুমকির মুখে থাকা ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশ ও প্রকৃতির দুরবস্থার
রাষ্ট্র
ও সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে
দেখিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নিজের তোলা আলোকচিত্র দিয়ে
আয়োজন করেছেন ভিন্নধর্মী প্রদর্শনীর।
শনিবার
বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১ নাম্বার গ্যালারিতে
শুরু হয় "বিপন্ন প্রকৃতি পরিবেশ" শিরোনামের এই প্রদর্শনী। নীরব
ঘাতক বায়ূ দূষণ, জলাধারের মৃত্যু, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা -আবর্জনার নিচে ঢাকা শহর
এবং হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ ইত্যাদি চারটি
থিমে নদী, প্রকৃতি ও
পরিবেশ দূষণের উপর তোলা ৬০টি
ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে
এই প্রদর্শনী।
ছয়দিনব্যাপী
এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় অতিথি ছিলেন নিউএইজ সম্পাদক নুরুল কবির, অর্থনীতিবিদ
আনু মুহাম্মদ, শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের চীফ ফটো সাংবাদিক
আবু তাহের খোকন প্রমুখ।
প্রদর্শনীর
উদ্বোধনীতে বিভিন্ন ছবি দিয়ে তৈরি
একটি ক্যাটালগের মোড়ক উন্মোচন করা
হয় ও একটি ভিডিও
ইনস্টলেশন প্রদর্শন করা হয়।
উদ্বোধনী
আনুষ্ঠানিকতায় আনু মুহাম্মদ বলেন,
পুঁজিবাদের কারণে পরিবেশ বর্তমানে হুমকির মুখে। কোথায় টাকা ইনভেস্ট করলে
মুনাফা অর্জন হবে সেসব চিন্তা
থেকে পুঁজিবাদীরা নিজেদের অর্থের সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে গিয়ে
পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বন কেটে উজাড় করা
হচ্ছে, কল কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিকে
নদীর পানি দূষিত করা
হচ্ছে। একটা শ্রেণী দিনে
দিনে অর্থের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে কিন্তু
দেশের সাধারণ মানুষেরা অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত পরিবেশে
বেড়ে উঠে দিনে দিনে
মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
যে পরিবেশে পাখি বেড়ে উঠতে
পারে না, সেই পরিবেশে
মানুষও সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। পরিবেশকে রক্ষায় কোনো সরকার ইতিবাচক
পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে বর্তমানে আমাদের
এই দুরবস্থা। পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
নুরুল
কবির বলেন, নাগরিকদের অসচেতনতার কারণে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে।
যার কারণে হুমকির মুখে মানুষের শারীরিক
ও মানসিক স্বাস্থ্য। প্রকৃতিকে বিপন্ন করা হচ্ছে আর
দূষিত করা হচ্ছে বলে
আজকে প্রাণীকূলের দুরবস্থা। মানুষকে৷ ও রাষ্ট্রকে সচেতন
করার জন্য ফটো
সাংবাদিক সনি রামানি তার
ক্যামেরার ফ্রেমে বিপন্ন পরিবেশকে তুলে ধরে যে
অসাধারণ কাজটি করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার
দাবিদার। ক্যামেরার ফ্রেমে ফ্রেমে প্রকৃতির দুরবস্থা চোখে আঙ্গুল দিয়ে
দেখিয়ে সনি রামানি তার
কাজটি করেছেন। বাকি কাজ রাষ্ট্রের।
পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদেরকেও সচেতন হতে হবে।
প্রতিদিন
বিকাল ৩টা থেকে রাত
৮টা পর্যন্ত সবশ্রেণীর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে
প্রদর্শনীর গ্যালারি।
২৪ এপ্রিল শেষ হবে ছয়দিনের
এই প্রদর্শনী।