শেরপুরের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া প্রথমবারেরমতো চিয়া সিড চাষ করে সাড়া ফেলেছেনা। মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এদিকে, প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছেন অনেকেই। অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় আগ্রহও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামের মৃত মোজাফফর আলী এবং মোছা. ছানোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে শিমুল মিয়া চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। শিমুল ২০১৩ সালে ইমামবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি ও ২০১৫ সালে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে ইংরেজিতে সম্মান শ্রেণিতে পড়ছেন। পাশাপাশি শখের বশেই বিভিন্ন ঔষধি গাছের চাষ করছেন।
শিমুল বলেন, মূলত কৃষির প্রতি ভালবাসা থেকে কৃষি নিয়ে কাজ করা শুরু। আমি চিয়া সিড ছাড়া বিভিন্ন ঔষধি গাছ এবং বস্তায় আদা চাষসহ বিভিন্ন নতুন সবজি নিয়ে কাজ করি। তিনি জানান, জেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে এবং প্রথমবারের মত বিদেশি উচ্চ মূল্যের অর্থকরী ফসল চিয়া সিডের চাষ করেন। ৫০ শতক জমিতে বীজ বপন, সার, সেচ ও ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এই সামান্য খরচ বাদে লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শিমুল আরো জানান, অন্য যে কোনো ফসলের থেকে চিয়া সিড চাষে খরচ কম। রোগবালাইও কম হয়। পাশাপাশি বাজার মূল্য বেশি থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এক বিঘা জমিতে দুই থেকে ৩শ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইনে প্রতি কেজি চিয়া সিডের বাজারমূল্য ৫শ থেকে ৬শ টাকা কেজি। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমা দানা ও তিল বীজের মতো। এটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি'সহ নানা পুষ্টিগুণ। যা মানবদেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া দেহের বাড়তি ওজন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। শুধু তাই নয় সুপার ফুড চিয়া সীডে আছে নানান ঔষধিগুণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাষ হয় চিয়া সীড।
স্থানীয় কৃষক রমজান আলী বলেন, আমরা সাধারণত ধান চাষ করি, কিন্তু এটা তেমন লাভ হয়না। এই এলাকায় নতুন যে চিয়া সিড ফসল চাষ হইছে, এটা দেখলাম। অনেক ফলন হইছে, শুনতাছি দামও বেশি। আমরা কৃষক মানুষ একটু লাভের আশা করি। যদি দেখি লাভ এটাতে বেশি, তাহলে আমরাও এটা চাষ করবো। আরেক কৃষক লাল মিয়া বলেন, বিদেশি ফসল চিয়া সিড যে আমাদের দেশে চাষ হয় , এটা আগে জানতাম না। আর অল্প সময়ের মধ্যেই এই ফসল ঘরে আসে। দামও ভালা। এটাইতো চাষ করা দরকার আমাদের।
কামারিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খাদেম মিয়া বলেন, কৃষি আমাদের বাপ-দাদার আদি পেশা। বর্তমান অনেকেই কৃষি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তবে আমরা গর্বিত যে, গ্রামের সন্তান শিমুল বিদেশি ফসল চিয়া সিড চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। এটি আমাদের একদিকে যেমন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। বর্তমানে যেটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিতি। আমাদের একজন কৃষি উদ্যোক্তা তিনি এই চিয়া সিড আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এটি একটি স্বল্প মেয়াদী ফসল এবং এই ফসল চাষে পানি অনেক কম লাগে। বাংলাদেশের যেসমস্ত এলাকায় সেচের ঘাটতি আছে, সেসব এলাকায় এই চিয়া সিড চাষ উত্তম। এটির বাজার মূল্যেও বেশ ভালো। বর্তমানে এই ফসল চাষ করতে অনেক কৃষক উদ্ধদ্ব হচ্ছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি। কোনো কৃষি উদ্যোক্তা যদি এই ফসল চাষে আগ্রহ থাকেন, তাহলে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।