নওগাঁর মহাদেবপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একসাথে ৮৪টি বৃক্ষ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় পরিবেশবিদরা। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশিষ্ট পাখি গবেষক কুঞ্জবন বিচিত্র পাখি উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মুনসুর সরকার সভাপতিত্ব করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, এটিএন বাংলার নির্বাচিত সাদা মনের মানুষ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গেছো মামা শামসুদ্দিন মন্ডল, পরিবেশ সাংবাদিক কিউ, এম, সাঈদ টিটো, কাজী সামসুজ্জোহা মিলন, কাজী রওশন জাহান, সোহেল রানা, অসিত দাস, বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুল হক মনি, সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ আফান প্রমুখ।
এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারিদিক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খুরশিদুল ইসলামের প্রত্যাহার দাবি করেন। বক্তারা বলেন, একটি ক্যাম্পাসের একসাথে ৮৪টি বৃক্ষ হত্যা করা হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকা নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন এমনিতেই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ পানিয় জলের সংকটে ভূগছেন। এরকম সময়ে এই তরতাজা বৃক্ষ নিধন মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হবে। এসব গাছে অসংখ্য পাখির বাসা রয়েছে। বাসাগুলোতে রয়েছে বাচ্চা। এসব প্রাণ সংহার থেকে বিরত থাকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনেরও হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অত্যন্ত তরিঘরি করে কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে লুকোচুরি করে মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে ৫শ’ টাকা করে সিডিউল বিক্রি, ৪০ হাজার টাকা করে বিডি জমা নিয়ে গোপন বাক্সে টেন্ডার আহ্বান করেন। বুধবার দুপুরে সে টেন্ডার খোলা হয়। স্থানীয় খাজুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম চার লক্ষ ৩০ হাজার টাকার দরপত্রে গাছগুলো পান। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় নিগোশিয়েটকারিদের তৎপরতায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মোট সিডিউল বিক্রি হয় ৩২টি। কিন্তু জমা দেয়া হয় মাত্র ৭টি। সরকারি নিলাম বাক্স খোলার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই দ্বিতীয় ডাকের আয়োজন করা হয়। এতে গাছগুলো সরকারি ডাকের দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হয়। নিগোশিয়েটকারিরা সবকটি সিডিউল সংগ্রহ করে ৭টিতে নিজেদের ইচ্ছামত কম দাম লিখে দাখিল করে। পরে লাভের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খুরশিদুল ইসলাম জানান, কয়েকটি গাছ ঝরে ভেঙ্গে পড়ায় সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। সিডিউলে সরকারি দাম উল্লেখ কেন করা হয়নি, কিংবা এতগুলো গাছ বিক্রির বিষয় কোন পত্রিকায় দেয়া হয়নি তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অল্প কয়েকটি গাছ মরা হলেও অসংখ্য ভালো গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা যেকোন মূল্যে এসব গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি জানান।