রামগতিতে তিন শিশু ধর্ষণ চেষ্টা, মুয়াজ্জিনসহ গ্রেফতার ২

এফএনএস (নজরুল ইসলাম; রামগতি, লক্ষ্ণীপুর) : | প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
রামগতিতে তিন শিশু ধর্ষণ চেষ্টা, মুয়াজ্জিনসহ গ্রেফতার ২

লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে গত তিন দিনে সাত থেকে দশ বছর বয়সের তিন কন্যা শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রামগতি থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক মুয়াজ্জিনসহ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃরা হচ্ছে চর আফজল গ্রামের কারী আহমদ উল্যাহ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও স্থানীয় একটি নুরানি মাদ্রাসার শিক্ষক জিহাদুর রহমান (২২)। সে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার উত্তর চর বাগ্যা গ্রামের মো. মমিনের ছেলে, উপজেলার চর নেয়ামত গ্রামের অটোরিকশা চালক বাহার উদ্দিন (৬০)। বাহার উদ্দিন একই এলাকার মৃত তছির আহমেদের ছেলে। গ্রেফতারকৃতদের লক্ষ্ণীপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অপর মামলার আসামি চর বাদাম ইউনিয়নের কারামতিয়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মাকসুদ (৪২) এখনো গ্রেফতার হয়নি। 

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চর নেয়ামত গ্রামের রব রোড এলাকায় স্থানীয় একটি মুরগির খামারের আড়ালে নিয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে অটো চালক বাহার উদ্দিন। ছাত্রীটি স্কুল থেকে একা বাড়ি ফেরার পথে এঘটনা ঘটে। এসময় তার চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে বাহার দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে ছাত্রীটির মা বাদি হয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বাহার উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।

অপর ঘটনায় সাত বছর বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে উঠেছে স্থানীয় একটি জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জিহাদুর রহমানের (২২) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী শিশুটির মা বাদী হয়ে রামগতি থানায় মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত জিহাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজাল গ্রামের কারিগো গোজা এলাকার কারী আহম্মদ উল্যাহ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জিহাদের থাকার ঘরে এ ঘটনা ঘটে। জিহাদ মুয়াজ্জিন ছাড়াও স্থানীয় একটি নুরানি মাদ্রাসার শিক্ষক। সে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার উত্তর চর বাগ্যা গ্রামের মো. মমিনের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটি ওই মাদ্রাসার ২য় জামাতের শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন মাদ্রাসা ছুটি হওয়ার পর অভিযুক্ত মুয়াজ্জিন খাওয়ার প্লেট ধোয়ার কথা বলে শিশুটিকে তার রুমে ডেকে নেয়। রুমে নিয়ে শিশুটির স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় ও ঠোঁটে কামড় দেয়। একপর্যায়ে খাটে শোয়াইয়া শরীরের পোষাক খুলে ধর্ষণের চেষ্টা করে। শিশুটি চিৎকার করলে তখন মুয়াজ্জিন তাকে ছেড়ে দেয়। ঘটনার পরেরদিন বুধবার শিশুটির মা শিশুটিকে মাদ্রাসায় যেতে বললে সে যেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং কান্নাকাটি শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার বিস্তারিত তার মাকে খুল বলে। এর আগেও মুয়াজ্জিন শিশুটিকে তার রুমে ডেকে নিয়ে একাধিকবার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয় বলে শিশুটি তার মাকে জানায়। শিশুটির মা বাদি হয়ে জিহাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত জিহাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়া গত রবিবার দুপুরে রামগতি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সমবায় গ্রাম এলাকায় সাত বছর বয়সের এক শিশুকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠে তারই ফুফা মো. মাকসুদের (৪২) বিরুদ্ধে। মাকসুদ উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের কারামতিয়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। পেশায় একজন জেলে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটির মা বাদি হয়ে মাকসুদকে একমাত্র অভিযুক্ত করে রামগতি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মাকসুদ পলাতক রয়েছে। 

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন এসব ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, গত তিন দিনে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার পৃথক ঘটনায় রামগতি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে মুয়াজ্জিন জিহাদ ও অটে চালক বাহার উদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অপর অভিযুক্ত মাকসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে