ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে কমবেশি সবাই যখন ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভোগে এ সময় শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডাজনিত রোগ সর্দি, কাশি, গলাফোলা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া প্রভৃতিতে আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়। এসব রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালে সাধারণত নাপা ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের প্রয়োগ করা হয়। জানা গেছে হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ। ওষুধ পাচ্ছেনা রোগীরা। ওষুধ সংকটের ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে শিশু রোগীসহ অন্যান্য রোগীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ সংকটসহ “ব্যাপক” অনিয়ম রয়েছে। ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীরা প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকে। ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। অস্বচ্ছ পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার, জনবলের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে হাসপাতালের করিডোর ও মেঝেতে প্রায় সব সময় লেগেই থাকে রোগীর ভিড়। তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ওষুধের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি অন্যতম বড় সমস্যা। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ঘুষ ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের কর্মচারী ও ওয়ার্ড সহকারীরা হুইলচেয়ার সরবরাহ এবং বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ রোগীদের খরচ বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ওষুধের সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২০ সালে একটি জরিপে জানা যায় যে ৭২% সরকারি হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি নিয়মিত। এটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের বাধা তৈরি করছে। ওষুধের ঘাটতির জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। এর মধ্যে বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতা, সীমিত স্বাস্থ্য বিমা এবং বহিরাগত রোগীর সংখ্যা অত্যধিক হওয়া। জনস্বাস্থ্য খাতে গত ১২ বছরে দেশের জিডিপির ১%-এরও কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অপ্রতুল। স্বাস্থ্যবিমা না থাকার কারণে অধিকাংশ রোগী নিজ খরচে চিকিৎসা করতে বাধ্য হন। এ কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বাড়ায়। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো সরকারি হাসপাতাল। প্রধান ভিত্তি হওয়া সত্ত্বেও ওষুধের এমন সংকট কোনো পরিস্থিতিতেই কাম্য নয়। এখানে যথাসময়ে ওষুধ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার অন্যতম একটি কারণ সরবরাহকারীদের দায়িত্বহীনতা। এ সংকট মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত ঋতু পরিবর্তনের বাস্তবতায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধের দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।