রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর খেয়াঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আলাতুলি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
চরবাসীদের অভিযোগ, ভারত সীমান্তঘেঁষা এসব ইউনিয়নের মানুষদের পদ্মা নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তবে ইজারাপ্রথার কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইজারাদাররা সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করছেন। এমনকি মাঝেমধ্যে ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদ করলেই নৌযান চলাচলে বাধা দেওয়া হয় এবং মারধরের ঘটনাও ঘটে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, খেয়াঘাটের ইজারাদাররা চরবাসীদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি জোরপূর্বক টোল আদায়েরও অভিযোগ ওঠে। তারা জানান, খেয়াঘাট থেকে ইজারাপ্রথা তুলে দিয়ে মাঝিদের মাধ্যমে সরাসরি পারাপারের ব্যবস্থা করতে হবে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি বলেন, "ইজারাদাররা বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় এখন নিত্যদিনের ঘটনা।"
স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোসেন ইমন বলেন, "আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। চরের কৃষিজীবী মানুষের কাছ থেকেও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা স্থায়ীভাবে এই ইজারা প্রথার অবসান চাই।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চরবাসী ইমাম হোসেন অভিযোগ করেন, "ঘাটের দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে আমাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তাই এখন আমাদের একটাই দাবিÑ স্থায়ীভাবে খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে।"
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, "ইজারাদারদের বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে নিষেধ করা হলেও তারা তা মানছে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও ফল পাইনি। এই অঞ্চলে খেয়াঘাট পরিচালনার কোনো প্রয়োজন নেই।"
মানববন্ধন শেষে চরবাসীরা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, "চরের বাসিন্দাদের দাবির বিষয়ে আমরা একটি কমিটি গঠন করবো। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।"
এ সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, বর্তমানে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এক মাসের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে, যার মেয়াদ ১১ মে শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে ইজারাদারদের অতিরিক্ত টোল আদায় বা হয়রানি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে খেয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম অরণ্য কুসুম, রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ।