প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে মামলাটিকে 'হয়রানিমূলক' উল্লেখ করে তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী, যেখানে রাষ্ট্রপক্ষও খালাসের আবেদনে আপত্তি জানায়নি।
রোববার (২৭ এপ্রিল) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত রায়ের তারিখ পরে নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন। শুনানির সময় ৯০ বছর বয়সী শফিক রেহমান নিজে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শফিক রেহমানের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ আদালতে বলেন, “ভিকটিম নিজে মামলা করেননি, পুলিশ অতিরিক্ত আগ্রহে এই মামলা দায়ের করেছে। কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। বরং এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া ছিল একপাক্ষিক ও পক্ষপাতদুষ্ট।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিচারক পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভিকটিমের প্রতি অস্বাভাবিক পক্ষপাত দেখিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, “এটি রাজনৈতিক হয়রানির জন্য দায়ের করা মামলা। শফিক রেহমান একজন সম্মানিত ও প্রথিতযশা সাংবাদিক। তার খালাসে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আপত্তি নেই।”
২০২৩ সালের আগস্টে এই মামলায় শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ (সিজার), যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এবং 'আমার দেশ' পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান (যিনি পরে খালাস পেয়েছেন)।
২০১৬ সালে এই মামলায় গ্রেপ্তারের পর শফিক রেহমান প্রায় পাঁচ মাস কারাগারে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। ছয় বছর পর গত বছরের ১৮ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন এবং ২১ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে আপিল দায়েরের শর্তে তার সাজার কার্যকারিতা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
আপিলের সময় শফিক রেহমান এই মামলাকে 'তথাকথিত ও ভিত্তিহীন' বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দাবি করেন, নিউ ইয়র্কের আদালত ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত মামলায় তার নাম বাদ দিয়েছে এবং সেখানে মামলাটি বাতিল হয়েছে। তার বক্তব্য, "আমার নাম যেখানে আমেরিকাতেই নেই, সেখানে ১০ হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশে এ ধরনের মামলা চলতে পারে কীভাবে?"
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করছি—আপনারা খুঁজে বের করুন, কীভাবে এবং কেন জয়কে আমেরিকায় যেতে হয়েছিল, অথবা মিন্টুর বাড়ির সামনে মধ্যরাতে জনতা ব্যাংকের এক স্টাফ কীভাবে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। সব প্রশ্নের উত্তর পেলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।"
বর্তমানে মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন প্রবীণ এই সাংবাদিক।