একশন এইড বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ও উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা (ইউএসএস) এর আয়োজনে ইমপাওয়ারিং গার্লস এন্ড কমব্যাটিং চাইল্ড ম্যারেজ প্রজেক্টের আওতায় ২৮ এপ্রিল সকাল ১১ টায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাকক্ষে স্টেকহোল্ডারদের সাথে অ্যাডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন ফুলবাড়ী ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম। প্রকল্প সমন্বয়কারী রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর চাইল্ড স্পন্সরশীপ এন্ড চাইল্ড রাইটস প্রোগ্রাম আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অধিকারভোগীদের চাহিদা সমূহ দায়িত্ববাহকগণ গুরুত্বের সাথে নিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় উপজেলার সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান প্রধানগণসহ প্রকল্পের সরাসরি অধিকার ভোগীগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অধিকার ভোগীগণ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব বাহককে তাদের চাহিদা সমূহ তুলে ধরেন।
কিশোরী ক্লাবের সদস্য রেশমা খাতুন তার বক্তব্যে বাল্যবিবাহ বন্ধে শিক্ষক, ইমাম, কাজী, ঘটক ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রান্তিক নারী নেত্রী হালালী খাতুন বলেন আমরা দরিদ্র মায়েরা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে বাল্যবিবাহ থেকে আমাদের শিশুরা রক্ষা পেতে পারে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী মোর্শেদ আলম তার বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহ এর জন্য অভিভাবক ও এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনলে বাল্যবিবাহ কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
পানিমাছ কুটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তা শেখ তার বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সমাজের প্রত্যেক অংশীজনকে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে কাজ করে যেতে হবে।
সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের প্রভাষক শংকর কুমার সেন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা একটি বাল্যবিয়ে দিয়ে হাজারটি সমম্যার জন্ম দেই। তাই আসুন আমরা বাল্যবিবাহ রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
ফুলবাড়ী উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি হাফেজ একরামুল হক বলেন অভিভাবক ও শিক্ষকের বড় দায়িত্ব হলো ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে পরিচালিত করা। এইটি হলে পরে বাল্যবিবাহ অনেকাংশে কমে যাবে।
পুরোহিত বিপ্লব চক্রবর্তী তার বক্তব্যে বলেন. বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি আইন হলে ভালো হয়। যেমনটি হচ্ছে পুরোহিত, কাজী অর্থাৎ যারা বাল্য বিবাহ পড়াবে তাকে বিয়ে সম্পন্ন করার অপরাধে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি বা জেলে দেয়ার বিধান থাকলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ সম্ভব।
ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ তার বক্তব্যে বলেন, একজন মেধাবী মেয়ের কখনোই বাল্যবিবাহ হয় না। তাই আমাদের মেয়েশিশুদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে হবে। যারা ভালো ফলাফল করছে না তারাই বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে।
ফুলবাড়ী থানার ওসি শরিফুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে আমার সহযোগিতা সবসময় থাকবে। যারা আমার কাছে আসবে তাদের আমি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।
ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম তার বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহ লিগ্যাল ভাবে হয় না। অধিকাংশ বাল্যবিবাহ ছেলেমেয়েদের প্রেম ঘটিত ফলাফল। আমরা সমাজে যারা পুরুষ আছি তারা যদি সিদ্ধান্ত নেই ১৮ বছরের কম কোন মেয়েকে আমরা বিয়ে কিংবা ছেলের বউ হিসেবে বেছে নিব না। তাহলেই অনেক বাল্যবিবাহ কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ রোধ করতে চাইলে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একসাথে কাজ করবো বলেও ইউএনও সভায় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।