আগামী জাতীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এ কথা জানান। “ডায়াস্পোরা বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার উন্নয়ন” শীর্ষক এই সেমিনারে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের সদস্যরা অংশ নেন।
সিইসি বলেন, “আমরা চাই পরবর্তী নির্বাচনে যাত্রাটা অন্তত শুরু হোক। সীমিত আকারে হলেও প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ চালু করাই আমাদের লক্ষ্য।” তিনি জানান, বিশ্বের অনেক দেশ এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও এখনো এই পদ্ধতি চালু হয়নি। “তবে আমরা নিজেদের সক্ষমতার ভিত্তিতে একটি বাস্তবধর্মী ও স্বচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে এটি চালু করতে চাই,”—যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পোস্টাল, অনলাইন ও প্রক্সি—এই তিন বিকল্প পদ্ধতি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে এখনো কোনো পদ্ধতিই চূড়ান্ত করা হয়নি। এই বিষয়ে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা চলছে।
সিইসি স্পষ্ট করে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি ও অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমর্থন অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “প্রবাসীদের ভোটাধিকার এখন শুধু নির্বাচন কমিশনের আগ্রহ নয়, বরং জাতিগত প্রত্যাশা। তাদের অন্তর্ভুক্তি ভোটার অংশগ্রহণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, “প্রবাসীদের ভোটের জন্য আমাদের হাইব্রিড মডেলে যেতে হবে—অর্থাৎ একাধিক পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তুতি রাখতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “প্রবাসীদের ভোট না থাকায় ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, এই উৎসবমুখর প্রক্রিয়ায় প্রবাসীরাও যুক্ত হোক।”
সেমিনারে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ও অংশীজনেরা নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন। তবে তারা চাইছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক, যাতে ভোটগ্রহণের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা হবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রথমবারের মতো দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।