আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি নিয়ে ভাঙ্গাগড়া খেলার অভিযোগ

এফএনএস (জি.এম. মুজিবুর রহমান; আশাশুনি, সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি নিয়ে ভাঙ্গাগড়া খেলার অভিযোগ

 আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি নিয়ে নানা গুঞ্জন, মত পার্থক্য ও গাইড বই চালানো নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলমান কমিটির পরিবর্তে নতুন কমিটি গড়ার লক্ষ্যে আড়ালে চলছে তৎপরতা। ফলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে পরস্পর বিরোধী আনাগোনা, তৎপরতা, মনোমালিন্যের আপসা আধাঁর দূর গগনে দৃশ্যমান হওয়ার আভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সুপ্রাচিন ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে জেলা পর্যায়ে নেতৃত্বদানের সম্মানিত ইতিহাস। তবে মাঝে মধ্যে সাবলীল কার্যক্রমে হোচট লাগার ঘটনার মত তিক্ত অভিজ্ঞতা এই সমিতিকে বহন করার রূঢ় অবস্থা সদস্যদের দেখতেও হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে মানুষ গড়ার কারিগরবৃন্দের মিলনকেন্দ্রের কৃতিত্ব স্মরণীয় হয়ে আছে। 

চলমান কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালে। ৩ বছর মেয়াদী নির্বাচনে গঠিত কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে। ৩১ টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোট গ্রহন করা হয়েছিল। ৬৪৭ জন ভোটার ছিলেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে আরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে সুশান্ত মন্ডল নির্বাচিত হন। নির্বাচিত কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে দায়িত্ব গ্রহন এবং সমিতির কার্যক্রম চালাতে থাকেন। ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে শিক্ষকদের একটি অংশের মধ্যে কমিটি বিরোধী তৎপরতার বাতাস বইতে দেখা যায়। এই বৈপরিত্যপূর্ণ মনোভাব ততটা প্রকাশ না পেলেও নতুন বছরের শুরুর দিকে গাইড বই পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে মনোদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্রথমে দ্বন্দ্বের প্রকাশ না ঘটলেও এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে আসে বেশ বড় হয়ে। এমনকি সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করে প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হলেও শেষ পর্যন্ত একটি পক্ষের নাছোড় আহবানে নতজানু হয়ে আপোষে মিমাংসা করে নেওয়া হয়। গাইড বই অনুমোদন নিয়ে কমিটির সভা, পরবর্তীতে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। তুহিন উল্লাহ নামে জনৈক সচেতন ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাঞ্জেরী গাইড বইসহ এনসিটিবি ও অনুমোদন বিহীন গাইড বই পাঠ্য পুস্তক তালিকার অন্তুর্ভুক্ত না করতে গত ১৬ এপ্রিল পত্রজারী করেন। পত্রজারীতে বিলম্ব হচ্ছে কেন এমন অভিযোগ তুলে তখন কোন একজন শিক্ষক নেতা ইউএনও অফিসের জনৈক সহকারী কর্মকর্তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে কৈফিয়তের শুরে ঠান্ডা মাথায় --- হুমকীর আদলে কথা বলেছিলেন বলে শিক্ষক মহলে আলোচনা শোনা যায়। 

এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষক গোপন সভায় মিলিত হয়েছিলেন বলে জানাগেছে। সভায় কে কে উপস্থিত ছিলেন বা কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে অসমর্থিত সূত্রে জানাগেছে, সভায় বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে আলোচনা হয়। কমিটি বাতিল, বিশেষ করে সভাপতি ও সেক্রেটারীকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাথে সাথে পাঞ্জেরী এর পরিবর্তে অন্য কোন প্রকাশনীর গাইড বই অনুমোদন দিয়ে স্কুলে পড়ানোর বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভায় উপস্থিতির সংখ্যা নগন্য থাকায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূলতবী ঘোষণা করা হয় বলে সূত্রে জানাগেছে। সভায় বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের উপস্থিতি বেশী ছিল বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

এব্যাপারে সরাপপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী বছর নভেম্বরে শেষ হবে। গত ৫ আগস্টের পর হতে এই কমিটি কোন মিটিং করতে পারেনি। সভায় সকলে একমত হয়ে দাবী করেন, তারা পদত্যাগ করুক। যারা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে পারে তারা দায়িত্ব নিক। সভায় ১৮ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান সমিতি পাঞ্জেরী গাইড নির্বাচন করেছিল। ইউএনও সাহেব গাইড বাতিল করে দিয়েছেন। 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি কুঁন্দুড়িয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। গত ৩০/০৯/২৪ তাং আমরা আশাশুনি গার্লস হাই স্কুলে সভা করি। ৩১/১২/২৪ তাং শরাফপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভা করি। ২৪/১২/২৪ তাং কচুয়া গার্লস হাই স্কুলে রেজুলেশন ছাড়া সভা করি। গত ২১/১/২৫ তাং ২২ জন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দকে অবসর ভাতা প্রদান করি। গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা না থাকায় আর মিটিং আহবান করা হয়নি। তবে আগামী ১১ মে মিটিং আহবানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া, প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন কিছু শিক্ষককে নিয়ে নির্বাচিত কমিটি বাতিল ঘোষণা করার কথা বলছেন বলে শুনেছি। আমরা নির্বাচিত ও জেলা কমিটির অনুমোদিত কমিটি। আমরা বৈধ ভাবে যথা নিয়মে সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে আসছি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে