চার বছরের এক শিশুর ঝাড়ফুঁক দেওয়া পানি ও তেল ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে অসুস্থ রোগীরা, এমন বিশ্বাসে শিশুটির বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। এ খবর এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভাটি লঙ্গরপাড়া এলাকায় এমন কাণ্ডে মানুষের ভিড় জমলেও সচেতন মহল বলছেন, এটা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়।
ঝাড়ফুঁক দেওয়া এই শিশুর নাম লাবীব। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল ওয়াহাবের এই ছেলে শিশুটির পরিচয় এখন ‘শিশু কবিরাজ’। তার স্বজন ও অনেক রোগীর দাবি, আল্লাহর নামে ঝাড়ফুঁক দেওয়া তার তেল ব্যবহার করলে ও পানি পান করলে জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মিলছে। প্রথমে তার পরিবারের সদস্যদের রোগ মুক্তি, পরে তার আত্বীয় স্বজনের রোগমুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ। এরপর থেকেই বিভিন্ন রোগীকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে যাচ্ছেন শিশু কবিরাজ। তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, এটা আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা।
জানা যায়, প্রতিদিন শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে পানি ও তেলের বোতল এগিয়ে শিশুটির মুখের কাছে ধরছেন। আবার কখনও শিশুটি তার বাবার কোলে বসে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের বোতল ভর্তি পানি, তেলের শিশিতে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা এবং বিকেল ৫টায় দুই ধাপে চলে এই ঝাড়ফুঁক। আগত রোগীর মধ্যে নারীরাই বেশি।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান বলেন, আমার দ্বিতীয় বারের মতো স্ট্রোক হওয়ার পর একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এই শিশু কবিরাজের চিকিৎসায় আমি এখন সুস্থ। আমি এখন লাঠি ছাড়া দ্রুত হাঁটতে পারি।
শিশুটির বাবা বলেন, আমার ছেলে শত শত মানুষের রোগ ভালো করেছে বলে রোগীরা আমাদের জানিয়েছেন। তার এই ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। প্রথমে সে তার মাকে চিকিৎসা করে ভালো করেছে। পরে সুস্থ করেন এলাকার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানীয় কয়েকজন ফুটবল খেলোয়াড়দের। এরপর থেকে জানাজানি শুরু হলে মানুষের ভিড় জমে। আল্লাহর নাম নিয়ে আমার ছেলে ফু দিয়ে দিলে অনেকেই সুস্থ হয়ে যায় বিধায় হাজারো মানুষ আসে। এর জন্য আমার ছেলে আজ পর্যন্ত একটি টাকা কারো কাছে নেয়নি।
শেরপুর সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিতে রোগ মুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, এই ঘটনাটি অবৈজ্ঞানিক এবং কুসংস্কার,যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ঠিকানাসহ অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।