গ্রীষ্মে লোডশেডিং-দায় শুধু তাপমাত্রার নয়, পরিকল্পনারও

এফএনএস | প্রকাশ: ২ মে, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
গ্রীষ্মে লোডশেডিং-দায় শুধু তাপমাত্রার নয়, পরিকল্পনারও

গ্রীষ্ম এলেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট যেন এক চিরচেনা দুর্যোগের নাম হয়ে ওঠে। চলতি এপ্রিল মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফের শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে যে ফাঁক তৈরি হয়েছে, তার পেছনে কেবল তাপমাত্রা বা মৌসুম দায়ী নয়Ñএর গভীরে রয়েছে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং আর্থিক জটিলতা। সরকারি তথ্যানুযায়ী, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অথচ উৎপাদন সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি ত্রুটি। দুটি ইউনিটই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একসময় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতির মুখে পড়ে। যদিও এক ইউনিট পরে সচল হয়, তবু এমন বিদেশনির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এরই মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারের কয়েক মাসের বিল বাকি রয়েছে। এতে তারা পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন চালাতে পারছে না। অথচ এই মুহূর্তে তাদের সহযোগিতা ছাড়া বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় দায় এড়ানো নয়, বরং দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার বাস্তব সমাধান খোঁজা জরুরি। একসময় শহরের মানুষকে খুশি রাখতে গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্যমূলকভাবে বেশি লোডশেডিং দেওয়া হতোÑসেই প্রথা থেকে সরে এসে এবার সরকার শহর-গ্রামভিত্তিক সমান ভাগে লোডশেডিং বিতরণের কথা বলছে। এটি এক ধরনের ন্যায্যতার বার্তা হলেও, বিদ্যুৎ সংকট ব্যবস্থাপনায় মূল লক্ষ্য হওয়া উচিতÑলোডশেডিং না দেওয়ার মতো সক্ষমতা তৈরি করা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, সরকারি পর্যায়ে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহে গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। সেই প্রেক্ষাপটে জনগণের জন্য এ এক অনিশ্চয়তার বার্তা। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুধু ভোগান্তিই নয়, শিল্প, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা যদি সত্যিই একটি কার্যকর ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চাই, তবে এখনই সময় আর্থিক দায় মেটানো, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎস নিশ্চিত করা এবং ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনা। প্রতি বছর গ্রীষ্ম এলেই বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে হতাশার গল্প যেন আর না লিখতে হয়Ñসেই চেষ্টাই এখন সবচেয়ে জরুরি।