ফুটওভার ব্রিজ: নিরাপত্তাহীন নগরের নীরব সংকেত

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ মে, ২০২৫, ০৭:২১ পিএম
ফুটওভার ব্রিজ: নিরাপত্তাহীন নগরের নীরব সংকেত

রাজধানী ঢাকার সড়ক নিরাপত্তা ও পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শহরের এসব ব্রিজ এখন পথচারীদের জন্য আর নিরাপদ বা ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো নয়, বরং অনেক সময় তা হয়ে উঠছে ভয় ও বিব্রততার প্রতীক। ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত শাঁখারীবাজার মোড়ের ফুটওভার ব্রিজের অবস্থাই উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে নিচের সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে, অন্যদিকে ওপরের ব্রিজে জমে থাকা মলমূত্র, দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতা পথচারীদের বাধ্য করছে রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে। এমন পরিস্থিতি কেবল এ জায়গায় নয়Ñরাজধানীর অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ একই অব্যবস্থাপনার শিকার। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অচল চলন্ত সিঁড়ি, হকারদের দখল, ছিনতাই ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্যÑএই সবকিছুর ফলে ফুটওভার ব্রিজগুলো এখন ব্যবহারকারীদের জন্য এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে একদিকে যেমন পথচারীরা হতাশ ও বিরক্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আধুনিক ডিজাইন, এক্সেলেটর, ফুলের টব, সোলার প্যানেলÑসবই ছিল ‘মডেল শহরের’ স্বপ্নের অংশ। কিন্তু বাস্তবে এসব রূপ নিচ্ছে অযত্ন ও অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবিতে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান যথার্থই বলেছেনÑনান্দনিক করে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করলেই হবে না, বরং এর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত নজরদারি জরুরি। অপরদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছেÑতারা নিয়মিত টহল দেন, অভিযান চালান। বাস্তবে কিছু অভিযান হয়ত হয়, কিন্তু বাস্তবতার চিত্র বলে দেয় এই টহলের কার্যকারিতা কতটা স্থায়ী বা পর্যাপ্ত। গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় দুই ছিনতাইকারীকে জনতা ধরে পিটিয়ে ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখেÑএ ঘটনা শুধু আইনহীনতার নয়, জনঅসন্তোষেরও প্রতিচ্ছবি। সমালোচনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আমাদের দায়িত্ব এ সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করাও। ঢাকার নাগরিকেরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। সচেতন নাগরিক, সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কোনোভাবেই নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন ফুটওভার ব্রিজ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন আরও সক্রিয় প্রশাসন, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, হকার ও অপরাধীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং জনসচেতনতা বাড়ানো। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো যেতে পারেÑসিসিটিভি, স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কারের ব্যবস্থা কিংবা নাগরিক অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোও কার্যকর হতে পারে। একটা শহর কতটা সভ্য, তা বোঝা যায় তার ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ দেখেই। তাই নগর উন্নয়নের এই মৌলিক ক্ষেত্রটিতে অবহেলার কোনো জায়গা নেই। ফুটওভার ব্রিজ হোক নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য ও সচেতনতায় ভরপুর এক নাগরিক অবকাঠামোÑএটাই এখন সময়ের দাবি।