রাজধানীর সড়কগুলোতে চলাচলকারী বিপুলসংখ্যক যানবাহনের ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হওয়ার কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বর্তমানে এমনকি পূর্বাপেক্ষা বহু গুণ হয়েছে। শহরের যানজটে যদ্রূপ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, তদ্রূপ মানুষের কর্মশক্তি হ্রাস পায়। শহরের এমন পরিস্থিতি আমাদের মনস্তাত্ত্বিক জগতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা নাগরিকদের ব্যক্তি ও সাংসারিক জীবনে অনেকাংশে অস্থিরতারও কারণ। অত্যধিক যানজটের ফলে আমরা প্রতিদিন অর্থনৈতিক দিক হতেও বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন। ২০২২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বৎসরে ১ হাজার ৪০০ কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়। ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৮০ লক্ষাধিক শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪০ কোটি টাকা। যুগ যুগ ধরে সরকার এই সকল সমস্যা সমাধানে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেই সকল প্রকল্প অতি সামান্যই জনগণের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। এখনও যদি বেহাল সড়কগুলির কার্যকর কোনো সমাধান দিতে না পারা যায়, তা হবে চরম হতাশাজনক। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পেশাজীবী শ্রেণি, যার বিপুলসংখ্যকের বসবাস এই ঢাকা শহরে। জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশও এই শহর হতেই আসে। বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটি লোকের রাজধানীতে বসবাস, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। সুতরাং এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যুগ যুগ ধরে নগর জীবনে আমাদের সুষ্ঠু নীতি গ্রহণের অভাবে জাতিগতভাবে আমরা দিনের পর দিন পিছিয়ে পরছি। রাজধানী ঢাকার যান চলাচল ব্যবস্থা প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া এ থেকে উত্তরণের পথ নেই। রাজধানীতে এমনিতেই রাস্তার ধারণক্ষমতার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অযান্ত্রিক যানের অবাধ বিচরণ, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, পরিকল্পনাহীন ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, শহরের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচল, চালক ও পথচারীদের নিয়ম না মানার সংস্কৃতি। আরও আছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসহ্য যানজটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজধানীর জীবনযাত্রা। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর জনমনে সংস্কারের প্রশ্নটি প্রধান হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা যদি নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো শীঘ্রই মিটাতে না পারি তা হলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না বলে আমাদের আশঙ্কা। তাই শহরের নির্মাণাধীন সড়কগুলোতে পুনরায় কার্যারম্ভ আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আরও কর্মতৎপরতা প্রদর্শন করতে হবে।