চুক্তির বিপরীতে গুদামে সরবরাহ ৮০ ভাগ চাল

রাজশাহী বিভাগের ৬১ চালকলের লাইসেন্স বাতিল

এফএনএস (এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম; রাজশাহী) : | প্রকাশ: ৫ মে, ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম
রাজশাহী বিভাগের ৬১ চালকলের লাইসেন্স বাতিল

খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেও সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ না করার জেরে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার মোট ৬১ চালকলের লাইসেন্স বাতিল করেছে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তবে চুক্তি অনুযায়ী ৩০টি চালকলের মালিক প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ৮০ ভাগ চাল গুদামে সরবরাহ করেছে। গুদামে ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ টন ৯৪ হাজার ৭০৭ টন সংগ্রহ হয়েছে। আর ২১ হাজার ৮৯১ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৯ হাজার ৫২৯ টন সংগ্রহ হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত আমন মৌসুমে চাল সরবরাহের জন্য এ বিভাগের ১৬২টি চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করে। আর ওই চুক্তি অনুযায়ী ৩০টি চালকলের মালিক প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ৮০ ভাগ চাল গুদামে সরবরাহ করেন। অন্যদিকে আরও ৭১টি চালকল মালিক প্রতিশ্রুতির ৫০ ভাগ চাল গুদামে সরবরাহ করেছে। আর চুক্তি করে কোনো চালই দেয়নি ৬১টি চালকলের মালিক। যে কারণে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সম্প্রতি ১৬১ চালকল মালিকের লাইসেন্স বাতিল করল খাদ্য বিভাগ। ফলে লাইসেন্স বাতিল হওয়া এসব চালকল মালিকরা আর রাইস মিলে চাল তৈরি, বিক্রি বিপণন ও সরবরাহ করতে পারবে না।

সূত্র মতে, এর আগে গত ১৯ মার্চ চুক্তিযোগ্য হলেও চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগের ৯১৩টি চালকলের মালিককে শোকজ করে আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য বিভাগ। এসব চালকল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশও করেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে গত ২ এপ্রিল ৬১ চালকল মালিকের খাদ্য উৎপাদন সংক্রান্ত লাইসেন্স বাতিল করেন।

রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তথ্যমতে, বাতিল ৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সেদ্ধ চালের কোনো চাহিদা পূরণ নাকারীদের মধ্যে রাজশাহীর ১টি, নওগাঁর ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি, পাবনার ১১টি, বগুড়ার ৩৪টি ও জয়পুরহাটের ৩টি চালকল রয়েছে। অন্যদিকে আতপ চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১টি চালকল। আর লাইসেন্স বাতিলের আগে এসব চালকল মালিকদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়ার বিপরীতে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চাকদার বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহ করে অনেক চালকল মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দিতে গিয়ে অনেক চালকল মালিকের প্রতি টনে দুই হাজার টাকার মতো করে লোকসান হয়েছে। লোকসান দিয়ে অনেকের পক্ষে চাল সরবরাহ সম্ভব হয়নি। সরকার যদি সঠিক দাম দেন, তাহলে সব মিল মালিক চাল সরবরাহ করবে।

রাজশাহী খাদ্য অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, রাজশাহী বিভাগের যেসব চালকল মালিক চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি এমন ৯১৩টি চালকল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের সতর্ক করা হয়েছে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

এর আগে রাজশাহীতে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে কৃষক এবং চালকলের তালিকা তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ মতে, দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ধানের মতো চাল সরবরাহে এসব অনিয়ম করছেন। ফলে প্রকৃত চাষি এবং চালকল মালিকরা সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রির সুবিধা না পাওয়ায় পকেট ভরছে দলীয় ব্যানারে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে