দেশে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুই এক দিনের মধ্যে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রচন্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীর ঢাকায় হিমেল বাতাস বইছে। দেশজুড়ে শীতের তীব্রতার সঙ্গে কুয়াশার দাপটও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ১৬ তারিখ থেকে কুয়াশা আরও বাড়বে। এ ছাড়া দু-একদিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এ কয়দিন সূর্যের দেখা পেতে পেতে দুপুর হবে এবং আজ থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এমন অবস্থায় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গোপালগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গায়
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় দুটি জেলায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৪ ডিগ্রি। সেই সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। সকাল থেকে ছিল কুয়াশার দাপট। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে জনজীবন। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে খরকুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নিচ্ছেন তারা। গরম কাপড় পরে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, আগামী কয়েকদিনের ব্যবধানে তামপাত্রা আরও কমতে পারে। আসতে পারে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ আবহওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, সকাল ৯টায় গোপালগঞ্জের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। আগামী তিনদিন তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ঘন কুয়াশা থাকায় ভোরে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে।
কুষ্টিয়ায় হিমেল বাতাসের সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীত
কুষ্টিয়ায় তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হিমেল বাতাসের সঙ্গে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলায় চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে, হাড়কাঁপানো শীতে সারাদিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুরে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সকালের দিকে তীব্র কুয়াশায় যানবাহনও চলছে ধীরগতিতে। হাড়কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে শরীর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষেরা। প্রচণ্ড শীতে স্বাভাবিক চলাফেরাও অনেকটা থমকে গেছে। শীতের কারণে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না সল্প আয়ের মানুষেরা। বিভিন্ন স্থানে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। এদিকে, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা থাকায় ফুটপাতের বেচাকেনাই জমজমাট হয়ে উঠেছে। নতুন কাপড়ের দাম বৃদ্ধি যাওয়ায় পুরনো কাপড়ের দোকানের দিকে ঝুঁকছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। শহরের এনএস রোডের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের সামনে, বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটের সামনে, মিরপুর পশুহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বসেছে পুরনো কাপড়ের পসরা। কুষ্টিয়ার কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ বলেন, বৃহস্পতিবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন। সামনে আরও তাপমাত্রা আরও কমবে। এ আবহাওয়া কর্মকর্তা আরও জানান, তাপমাত্রা কমলেও এটা শৈত্যপ্রবাহ নয়। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নিচে হলে সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।