তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা খায়রুল আলম সবুজ বিদেশী জাতের আম চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। তার এ প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে মেসার্স সবুজ নার্সারী এন্ড কপি শপ। দিঘলিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে দিঘলিয়া-সুগন্ধী সড়কের গায়ে এ প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। শুধু আম চাষ নয়, আম চাষ ছড়িয়ে দেওয়া ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে এক অনন্য কেন্দ্র এ আম বাগানটি। এখান থেকে দেশী-বিদেশী নানা জাতের আমের কলম কিনতে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ছুটে আসেন। তার আম গাছগুলো ফুল আর কাঁচা-পাঁকা ফলে ভরে গেছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে হালকা খয়েরি, হালকা কাঁচা হলুদ, লাল হলুদ ও সবুজ রঙের আমগুলো। এ জাতের আমের চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। তরুন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এ আম চাষ বাণিজ্যিক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
২০০৮ সালে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গোয়ালপাড়া (ইসলামপাড়া) গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলক ভাবে দেশী আম হিম সাগর ও আম্রপালি জাতের চারা দিয়ে আম বাগান শুরু করেন। তিনি ১০ শতক জমিতে ৩টি হিম সাগরসহ কয়েকটি আমের চারা রোপণ করেন। এরপর ২০১০ সালে আরও ২৫টি প্রজাতির ৫০০টি আম গাছের চারা রোপণ করেন ১০ বিঘা জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছগুলো বড় হতে থাকে।
আম বাগান মালিক খায়রুল আলম সবুজ জানান, বাগানে মিয়াজাকি, চ্যাংমাই, কিউজাই, থ্রীটেস্ট, ব্রুনাই কিং কিংচাকাপাত, ডকমাই, চিয়াংমাই, রেড পালমার, আমেরিকান ক্যান, সখিনা, রেড আইবেরীসহ ২৫ প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। গাছ লাগানোর ২ বছর পর (মাঘ মাসে) মুকুল আসতে শুরু করে। এর ২ বচর পর পরিপূর্ণ আমে রুপ নেয়। কাঁচা অবস্থায় আমগুলো পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে আম পাঁকতে শুরু করে। আকার ভেদে প্রতিটি আমের ওজন ২শ গ্রাম থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, বিদেশী জাতের আম মিষ্টি, সুস্বাদু ও রাসালো। আমের আটি পাতলা। জাত ভেদে কাঁচা-পাকা আমের উপরের ও ভিতরের রঙ আলাদা। দেশী না হওয়ায় সতর্কতার সাথে পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। বিদেশী জাতের আম চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২শ টাকা কেজি দরে বানানা ও কিউজাই আম বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দুর-দুরন্ত থেকে নতুন জাতের আম দেখতে মানুষ ছুটে আসছেন বাগানে।
দিঘলিয়ার আম ও আমের চারা তৈরির সফল ও তরুন উদ্যোক্তা খায়রুল আলম সবুজ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার পিতা একজন সফল নার্সারী মালিক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন দেশী জাতের আমের কলম চারা তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ দিতেন। তার মৃত্যুর পর তার স্মৃতিকে ধারণ করে আমি আজ আমের জগতে সফল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী আম চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার নিমিত্তেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ জানান, কৃষক খায়রুল আলম সবুজ বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা লাগিয়েছেন। তার প্রতিটি গাছে আমের শোভা পাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে বাগান পরিদর্শন করেছি। তার বাগানে বিদেশী ১০ জাতের ১৫ টি আম গাছ রয়েছে। এই আম চাষ যাতে আরো ছড়ানো যায় সেই উদ্যোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেবে।