সিলেটের প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পর এসে রায় ঘোষণা করেছে আদালত। নিজের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করায় মৃত্যুদণ্ড পেলেন তারই ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না। একই মামলায় আরও দুজনকে ফাঁসির আদেশ, একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৬ মে) সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না; সবাই পলাতক।
রায়ে যা এসেছে
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন হলেনÑশামসুল ইসলামের ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, মো. জাহের আলী ও মো. আনসার আহমেদ। আদালত তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।
অন্যদিকে, মাইক্রোবাস চালক মো. বোরহান উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর আসামি মো. ইসমাইল হোসেন রানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়।
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড
২০১১ সালের ১৭ জুলাই, পবিত্র শবেবরাতের রাতে, সিলেট শহরের মীরবক্সটুলাস্থ নিজ বাসায় নামাজরত অবস্থায় হামলার শিকার হন আইনজীবী শামসুল ইসলাম। রায় অনুযায়ী, তার ছেলে মুন্না পেছন থেকে পাথর দিয়ে আঘাত করে তাকে অচেতন করেন। এরপর ইনজেকশন দিয়ে পুরোপুরি অচেতন করে তাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীতে।
ঘটনার সপ্তাহখানেক পর র্যাব-৯ এর সদস্যরা অভিযুক্ত আনসার, বোরহান ও রানুকে আটক করে। তাদের মধ্যে আনসার ও বোরহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বাবার সম্পত্তি চাওয়া থেকে হত্যাকাণ্ডে রূপ
আদালতের পেশকার মো. আহমদ আলী জানান, মুন্না দীর্ঘদিন ধরেই তার বাবার বাসার সামনের অংশ নিজের নামে লিখে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শামসুল ইসলাম চৌধুরী এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষোভে-দ্বেষে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার পাঁচ দিন পর বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
পরবর্তীতে সুরমা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের অংশবিশেষ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হয়।
ন্যায়বিচারের অপেক্ষা ও একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি
১৪ বছর পর এসে আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নিহতের পরিবার। তবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলেও পিতৃহত্যার মতো ভয়াবহ এক পারিবারিক ট্র্যাজেডি সমাজে গভীর রেখাপাত করে যাচ্ছে।