দফায় দফায় বাড়ছে স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে দেশের বাজার

একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ানো হলো দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকা, যা স্বর্ণের দামে আরেক নতুন মাইলফলক। এর মাত্র কদিন আগেই ভরিতে ৫ হাজার টাকা বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্য—১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা—ছুঁয়েছিল স্বর্ণ। ক্রমাগত এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তা থেকে শুরু করে জুয়েলারি ব্যবসায়ী, সবার মাঝেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) মঙ্গলবার (৬ মে) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। নতুন এই মূল্য ৭ মে (বুধবার) থেকে কার্যকর হয়েছে।

বাজুস-এর তথ্য অনুযায়ী, নতুন দামে বিভিন্ন ক্যারেট অনুযায়ী স্বর্ণের ভরিপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে:

• ২২ ক্যারেট: ১,৭৪,৯৪৮ টাকা

• ২১ ক্যারেট: ১,৬৭,০০৫ টাকা

• ১৮ ক্যারেট: ১,৪৩,১৪১ টাকা

• সনাতন পদ্ধতি: ১,১৮,৪৬০ টাকা

এছাড়াও, প্রতিটি স্বর্ণ বিক্রয়ের মূল্যের সঙ্গে সরকার-নির্ধারিত ৫% ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ৬% ন্যূনতম মজুরি যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দামে এমন ওঠানামা চলতি বছর যেন রীতিমতো স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ২১ বার দাম বাড়ানো হয়েছে এবং ৮ বার কমানো হয়েছে। গত বছর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি—মোট ৬২ বার সমন্বয়, যার মধ্যে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল এবং ২৭ বার কমানো হয়েছিল।

এর মাত্র কয়েকদিন আগেই, ২২ এপ্রিল, ভরিতে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১,৭৭,৮৮৮ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

স্বর্ণের বাজারে এতো অস্থিরতা দেখা গেলেও রুপার দাম দেশে এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের রুপা প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ২,৮১১ টাকায়। অন্য ক্যারেট অনুযায়ী রুপার দাম:

• ২১ ক্যারেট: ২,৬৮৩ টাকা

• ১৮ ক্যারেট: ২,২৯৮ টাকা

• সনাতন পদ্ধতি: ১,৭২৬ টাকা

স্বর্ণের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা চরমভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন। গহনা কেনা অনেকের জন্যই এখন বিলাসিতার চেয়ে স্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাসংখ্যা কমে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম, ডলার বিনিময় হার, আমদানি ব্যয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পরিস্থিতি এ পরিবর্তনের মূল চালক। তবে সরকারের উচিত বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করা।