গণহারে মামলা

হয়রানি বন্ধ হোক

এফএনএস | প্রকাশ: ৭ মে, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
হয়রানি বন্ধ হোক

জুলাই-আগস্টে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মামলার নামে যখন ঢালাও আসামি করা হয়, ব্যক্তিস্বার্থে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা থাকে, তখন বিচার হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনায় করা এ ধরনের মামলার খবর পাওয়া যায়। হয়রানিমূলক এসব মামলায় বেশির ভাগ আসামি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, কোনো কোনো দলের নেতাকর্মী এবং একটি দালাল সিন্ডিকেট দেশজুড়ে বিপুল মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে। মামলাপ্রতি এরা লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে। আবার কোথাও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে, ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব মামলা করা হচ্ছে। দেখা গেছে, এসব মামলার বাদী হিসেবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে তাঁরা মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না। এমনকি স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তির ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে কয়েক শ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আগে বা পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হত্যাসহ অন্যান্য মামলার এমন চিত্র দেখা যায়। শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরপরাধ মানুষ এসব মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাদ নেই সাংবাদিকরাও। সব মিলিয়ে মামলাকেন্দ্রিক অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশে। আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এসব মামলার বিরুদ্ধে কথা বলার পরও থামছে না হয়রানিমূলক মামলা দায়ের। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী বেশির ভাগ হত্যা মামলা তদন্তে তাঁদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রাজধানীর কয়েকটি থানায় পুলিশের পাশাপাশি অন্যদেরও মামলা বাণিজ্যে জড়িত হওয়ার সত্যতার খবর গণমাধ্যমে পাওয়া গেছে। এসব মামলায় হত্যার অভিযোগে মূল আসামিদের পাশাপাশি নিরীহ লোকদেরও জড়িয়ে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৫০০ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৬০০। এসব মামলায় ১০  হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার যদি সত্যি সত্যি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়, তাহলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এসব ঢালাও মামলা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।