বাংলাদেশে বর্তমানে ভূমিসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি-একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা, যা কৃষিজমি, নাগরিক অধিকার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমি ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১৩টি সংগঠন এই সংকট মোকাবেলায় কৃষি ও ভূমিসংস্কারভিত্তিক ৩৬টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে, যা এক সময়োচিত ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যায়। একইসঙ্গে প্রায় ৯০ হাজার কৃষিজীবী মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত আবেদনও সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, যা এ ইস্যুর গুরুত্ব ও জনসম্পৃক্ততার একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে যে প্রস্তাবনাগুলো উত্থাপিত হয়েছে, তা শুধু সমস্যার নিরূপণ নয়, বরং তা সমাধানের পথনির্দেশনা হিসেবেও বিবেচ্য। দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি, খাস জমির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ, ভূমি ব্যাংকের কার্যকর প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি একটি ‘ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি-এসবই বাস্তবায়নযোগ্য ও নাগরিক স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। বক্তারা যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে, ৭২-৭৫ শতাংশ মামলাই ভূমিসংক্রান্ত। প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে এই জটিলতার শিকার। এমন বাস্তবতায় ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি কেবল আদালতের উপর চাপ কমাবে না, বরং কৃষিজমির সুষ্ঠু ব্যবহারে সহায়ক হবে এবং ভূমির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্যায্যতাও কিছুটা লাঘব হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন আইন ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি ও ভূমি বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও তার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। ভূমি সংস্কার নিয়ে কোনো কমিশন এখনও গঠিত না হওয়া এই খাতের প্রতি নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘদিনের উদাসীনতার প্রমাণ। অথচ, একটি কার্যকর সংস্কার কমিশন কেবল জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনেই নয়, বরং ভূমিহীনদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কৃষি উৎপাদনের স্থায়িত্ব এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রস্তাবিত এই সংস্কার কমিশন গঠনে উদ্যোগ নেয়, তবে তা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচিত সরকারের জন্য এ খাতটি ঢেলে সাজানোর একটি সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি হবে। সুতরাং, কৃষি ও ভূমিসংক্রান্ত সংকট নিরসনে শুধু সংবেদনশীলতা নয়, প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার। জনসম্পৃক্ত প্রস্তাবনাগুলোর আলোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন সময়ের দাবি।